Comment

করদায় নির্ণয় প্রক্রিয়া

বাড়ি ভাড়া প্রাপ্তির উপর কর নির্ণয়

Estimated reading: 1 minute 30 views Contributors

বাড়িভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর কর নির্ধারণ করতে হলে বাড়ি মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, এবং অন্যান্য অনুমোদিত খরচ বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করা আবশ্যক। বাড়ি ভাড়া প্রদানের সময় যেসব খরচ করা হয়েছে, তা আয় থেকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট আয়ের উপর কর নির্ধারণ করতে হয়। বাড়িভাড়ার আয় থেকে করযোগ্য আয় নির্ধারণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে যথাযথভাবে করের দায় নির্ধারণ করা যায়। বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকানা পৈতৃক সূত্রে হোক, অথবা নিজে প্লট কিনে বাড়ি তৈরি করেই হোক, যদি করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করে, তাহলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে কর দিতে হবে।

বাড়িভাড়া আয়ের উপর কর নির্ধারণ

চলুন, বাড়িভাড়া আয়ের উপর কর নির্ধারণের পদ্ধতি বুঝতে মিস আয়েশার উদাহরণটি বিশ্লেষণ করি। মিস আয়েশার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় একটি চারতলা বাড়ি রয়েছে, যার প্রতিটি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে তিনি মাসে ২৫,০০০ টাকা ভাড়া পান। ভাড়া প্রদানের সময় তিনি এক মাসের অগ্রিম ভাড়া গ্রহণ করেন। বছর শেষে তার খরচের বিবরণ নিম্নরূপ:

  • বাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: ৬,৫০,০০০ টাকা
  • সিটি করপোরেশন কর: ২০,০০০ টাকা
  • বাড়ির বীমা প্রিমিয়াম: ২৫,০০০ টাকা
  • গৃহঋণের সুদ: ১,০০,০০০ টাকা

এই খরচগুলি বাদ দেওয়ার পর মিস আয়েশার অবশিষ্ট অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন, যেমন- শেয়ার ক্রয়, ডিপিএস, এবং জীবন বীমা প্রিমিয়াম। বাড়িভাড়া আয় থেকে করযোগ্য আয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খরচের হিসাব রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে সমস্ত খরচ বিবেচনায় রেখে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করা সম্ভব। এখন ধাপে ধাপে তার করযোগ্য আয়, বিনিয়োগ ভাতা, এবং কর রেয়াত নির্ণয় করব।

করযোগ্য আয়

ক্র. নংবিবরণটাকা
০১বাড়িভাড়া থেকে আয় (২৫,০০০ × ২ × ৪ × ১২)২৪,০০,০০০
০২মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ (২৪,০০,০০০ × ২৫%)(৬,০০,০০০)
০৩সিটি করপোরেশন কর(২০,০০০)
০৪বাড়ির বীমা প্রিমিয়াম(২৫,০০০)
০৫গৃহঋণের সুদ পরিশোধ(১,০০,০০০)
বাড়িভাড়া থেকে করযোগ্য আয়১৬,৫৫,০০০
উপরের টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে, মিস আয়েশার বাড়িভাড়া আয় থেকে খরচ বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় দাঁড়িয়েছে ১৬,৫৫,০০০ টাকা।

বাড়িভাড়া আয়ের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খরচের হিসাব রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব খরচ করযোগ্য আয় কমাতে সাহায্য করে। তবে, এই খরচের প্রমাণাদি যেমন বিল/ভাউচার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, যাতে কর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রমাণ দাখিল করা সম্ভব হয়। যদি অনুমোদিত খরচের প্রমাণাদি না থাকে, তাহলে করযোগ্য আয়ের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং সেক্ষেত্রে করের পরিমাণও বেড়ে যাবে। সুতরাং, করযোগ্য আয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে খরচের সমস্ত প্রমাণাদি যথাযথভাবে রাখা অত্যাবশ্যক।

বিনিয়োগ ভাতা এবং কর রেয়াত

ক্র. নংবিনিয়োগ খাতটাকা
০১শেয়ার ক্রয়৩,৫০,০০০
০২ডিপিএস (৫,০০০×১২)৬০,০০০
০৩জীবন বীমা প্রিমিয়াম৫০,০০০
মোট প্রকৃত বিনিয়োগ৪,৬০,০০০

বিনিয়োগ ভাতার ক্ষেত্রে কর রেয়াত পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। মিস আয়েশার করযোগ্য আয়ের ৩% অথবা তার মোট বিনিয়োগের ১৫% এর মধ্যে যেটি কম হবে, সেটিই কর রেয়াত হিসেবে ধরা হবে।

  • করযোগ্য আয়ের ৩%: ১৬,৫৫,০০০ × ৩% = ৪৯,৬৫০ টাকা
  • মোট বিনিয়োগের ১৫%: ৪,৬০,০০০ × ১৫% = ৬৯,০০০ টাকা

উপরোক্ত দুটি পরিমাণের মধ্যে কমটিই হবে কর রেয়াত। সুতরাং,মিস আয়েশার কর রেয়াত পাবেন ৪৯,৬৫০ টাকা।

বিনিয়োগ ভাতা কর রেয়াত নির্ধারণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিনিয়োগের মাধ্যমে কর রেয়াত পাওয়া সম্ভব হওয়ায় এটি করদাতার জন্য উপকারী একটি কৌশল। তবে কর রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য সঠিকভাবে বিনিয়োগের হিসাব রাখা প্রয়োজন। যদি বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে না থাকে, তাহলে কর রেয়াতের পরিমাণও কমে যাবে। সুতরাং বিনিয়োগে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করে করের সুবিধা গ্রহণ করা উচিত।

করদায় নির্ণয়

করযোগ্য আয়কর হারকরদায় (টাকা)
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত০%
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত৫%৫,০০০
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১০%৪০,০০০
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১৫%৭৫,০০০
অবশিষ্ট ২,৫৫,০০০ টাকা পর্যন্ত২০%৫১,০০০
মোট করদায়১,৭১,০০০
বাদ: কর রেয়াত৪৯,৬৫০
নিট করদায়১,২১,৩৫০

তাহলে মিস আয়েশার নিট করদায় হলো ১,২১,৩৫০ টাকা। রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় তাকে এই পরিমাণ টাকার চালান জমা দিয়ে তার কপি রিটার্নের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

রিটার্ন ফরম পূরণের ধারণা পেতে রিটার্ন ফরম অধ্যায়ের রিটার্ন ফরম পূরণ অংশের তফসিল -১ দেখুন।


Leave a Comment

Share this Doc

বাড়ি ভাড়া প্রাপ্তির উপর কর নির্ণয়

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel