Comment

অন্যান্য ও বিশেষ আয়

মূলধনী আয় গণনা পদ্ধতি

Estimated reading: 1 minute 12 views Contributors

পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা কৃষক ও ব্যবসায়ীর করদায় নির্ণয়ের আলোচনা করেছি, যেখানে কিছু মূলধনী আয়ের ধারণাও এসেছে। মূলধনী আয় হলো সেই আয় যা স্থায়ী কোনো সম্পদ বা পরিসম্পদ বিক্রি করে লাভ হিসেবে আসে। এই অধ্যায়ে আমরা মূলধনী আয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। মূলধনী পরিসম্পদ হস্তান্তর বা বিক্রয় করে যে লাভ হয়, তা মূলধনী আয় হিসেবে গণ্য হয়। তবে যদি সম্পদ হস্তান্তর না করা হয়, তবে তা মূলধনী আয় হিসেবে বিবেচিত হবে না। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ২০১৫ সালে ৩০ লাখ টাকায় একটি পাঁচ কাঠার জমি কিনে থাকেন এবং বর্তমানে এর মূল্য ৫০ লাখ টাকা হয়, তাহলে আপনার ২০ লাখ টাকার সম্ভাব্য মূলধনী লাভ হয়েছে। কিন্তু যেহেতু আপনি জমিটি বিক্রি করেননি, তাই এটি করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং এর উপর কোনো কর প্রযোজ্য হবে না।

মূলধনী আয়ের গণনা

মূলধনী আয় গণনা করতে গেলে পরিসম্পদের বিক্রয়মূল্য বা হস্তান্তর মূল্য থেকে পরিসম্পদের ক্রয়মূল্য বাদ দিতে হয়। সাধারণত, বিক্রয়মূল্য বলতে আমরা বুঝি কোনো কিছু বাজারে বিক্রি করার সময় যে মূল্য পাওয়া যায়। অপরদিকে, অর্জন মূল্য বলতে ক্রয়মূল্যের সাথে সম্পদ অধিগ্রহণের সময়ের সাথে সম্পর্কিত খরচগুলো যুক্ত করা হয়। যেমন, যদি আপনি একটি জমি কিনে থাকেন, তবে দলিল করার জন্য যেসব খরচ হয়েছে, তা ক্রয়মূল্যের সাথে যুক্ত করে অর্জন মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

উদাহরণ
সাইফ আহমেদ ২,০০,০০০ টাকার শেয়ার কিনেছেন এবং এজন্য তিনি ব্রোকার হাউজকে ৫০ টাকা কমিশন দিয়েছেন। সুতরাং অর্জন মূল্য হলো ২,০০,০৫০ টাকা। এক বছর পরে তিনি এই শেয়ার ২,৫০,০০০ টাকায় বিক্রি করেন এবং ৬০ টাকা ব্রোকারেজ কমিশন দেন। এক্ষেত্রে মূলধনী আয়ের হিসাব নিম্নরূপ:

  • বিক্রয়মূল্য = ২,৫০,০০০ – ৬০ (ব্রোকারেজ কমিশন) = ২,৪৯,৯৪০ টাকা
  • অর্জন মূল্য = ২,০০,০৫০ টাকা
  • মূলধনী লাভ = বিক্রয়মূল্য – অর্জন মূল্য = ২,৪৯,৯৪০ – ২,০০,০৫০ = ৪৯,৮৯০ টাকা

ন্যায্য বাজারমূল্য কখন প্রযোজ্য হবে?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্জন মূল্য নির্ধারণ করা সহজ হয় না। যেমন, কোনো সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে, উপহার হিসেবে বা দানের মাধ্যমে অর্জিত হলে, এর অধিগ্রহণ মূল্য জানা না-ও থাকতে পারে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৫৮ অনুযায়ী, এই ধরনের ক্ষেত্রে সম্পদের অধিগ্রহণের সময় যে ন্যায্য বাজারমূল্য ছিল, তা অধিগ্রহণ মূল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো, যেখানে এই নিয়ম প্রযোজ্য হতে পারে:

  • ১. উপহার, দান বা উইল এর মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ।
  • ২. উত্তরাধিকার বা সাকসেশন এর মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ।
  • ৩. প্রত্যাহারযোগ্য বা অপ্রত্যাহারযোগ্য ট্রাস্ট এর মাধ্যমে সম্পদ অর্জন।
  • ৪. ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিভাজন এর মাধ্যমে পরিসম্পদ অর্জন।

এই সকল ক্ষেত্রে অধিগ্রহণ সময়ের ন্যায্য বাজারমূল্যই হবে অধিগ্রহণ মূল্য।

উদাহরণ
সিয়াম আহমেদ ২০১৬ সালে তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাঁচ বিঘা জমি পেয়েছেন। ২০২৪ সালে তিনি পাঁচ কাঠা জমি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। যেহেতু সিয়াম আহমেদ জমিটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন, তার অধিগ্রহণ মূল্য জানা ছিল না। তিনি সরকারি ভূমি অফিস থেকে জানতে পারেন যে ২০১৬ সালে তার আশেপাশের জমির দাম ছিল প্রতি কাঠা ৩ লাখ টাকা। সুতরাং পাঁচ কাঠার অধিগ্রহণ মূল্য হবে ১৫ লাখ টাকা। বিক্রয়মূল্য থেকে অধিগ্রহণ মূল্য বাদ দিলে মূলধনী আয় দাঁড়ায়:

  • বিক্রয়মূল্য = ২০ লাখ টাকা
  • অধিগ্রহণ মূল্য = ১৫ লাখ টাকা
  • মূলধনী লাভ = বিক্রয়মূল্য – অধিগ্রহণ মূল্য = ৫ লাখ টাকা

কর কর্মকর্তা কখন মূলধনী আয় নির্ধারণ করতে পারেন?

করদাতাকে ন্যায্য বাজারমূল্য নির্ধারণ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। যদি দেখা যায়, ঘোষিত ন্যায্য বাজারমূল্য অস্বাভাবিকভাবে কম, তবে কর কর্মকর্তা তা পুনঃমূল্যায়ন করতে পারেন। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৬৬ অনুযায়ী, যদি ন্যায্য বাজারমূল্য ঘোষিত মূল্যের চেয়ে ১৫% বেশি হয়, তবে সহকারী কর কমিশনার উক্ত সম্পদের মূল্য পুনঃমূল্যায়ন করবেন। যদি পার্থক্য ২৫% এর বেশি হয়, তবে কর বোর্ডের অনুমোদনক্রমে সম্পদ ক্রয় করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

কোন কোন সম্পদ মূলধনী পরিসম্পদ হিসেবে গণ্য হবে না

  • ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাখা মজুদ, কাঁচামাল বা ভোগ্যপণ্য
  • ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী যেমন—পোশাক, সোনা, আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত গাড়ি, কম্পিউটার ইত্যাদি।

মূলধনী আয় থেকে করদায় নির্ণয়

চলুন, এখন তানজিবের করযোগ্য আয় এবং মূলধনী আয় নির্ণয় করি। ইয়াসিন মিয়া একজন চাকরিজীবী করদাতা এবং তার আয়ের সূত্র নিম্নরূপ:

আয়ের সূত্র:

  • ১. চাকরি থেকে মোট আয় ১৫,০০,০০০ টাকা, যার মধ্যে ৫০,০০০ টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে।
  • ২. শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ছিল ১০,০০,০০০ টাকা, যা এই বছর ১২,০০,০০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
  • ৩. পূর্বাচলে ৫ কাঠা জমি ছিল, যা ২০১৭ সালে ৫০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন এবং এই বছর ৫৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন, যেখানে বিক্রির সময় ২,৫০,০০০ টাকা উৎসে কর পরিশোধ করেছেন।

বীমা ও বিনিয়োগ:

ইয়াসিন মিয়ার একটি ১০ লাখ টাকার জীবন বীমা পলিসি রয়েছে, যার প্রিমিয়াম ৭০,০০০ টাকা প্রতি বছর। এই বছর তিনি দুই বছরের প্রিমিয়াম একসাথে ১,৪০,০০০ টাকা পরিশোধ করেছেন এবং ৩,০০,০০০ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন।

করযোগ্য আয় নির্ণয়:

বিবরণটাকা
চাকরি থেকে আয়১৫,০০,০০০
অব্যাহতি (১/৩ অংশ বা সর্বাধিক ৪,৫০,০০০)৪,৫০,০০০
চাকরি থেকে করযোগ্য আয়১০,৫০,০০০
শেয়ারের বিক্রয়মূল্য থেকে আয়
জমি বিক্রি থেকে মূলধনী আয়৫,০০,০০০
মোট করযোগ্য আয়১৫,৫০,০০০

বিনিয়োগ ভাতা ও কর রেয়াত নির্ণয়:

বিনিয়োগের খাতটাকা
জীবন বীমা প্রিমিয়াম১,০০,০০০
সঞ্চয়পত্র ক্রয়৩,০০,০০০
মোট বিনিয়োগ ভাতা৪,০০,০০০

কর রেয়াতের হিসাব:

  • ১. করযোগ্য আয়ের ৩% = (১৫,৫০,০০০× ৩%) = ৩১,৫০০ টাকা
  • ২. বিনিয়োগ ভাতার ১৫% = (৪,০০,০০০ × ১৫%) = ৬০,০০০ টাকা
  • ৩. সর্বাধিক সীমা = ১০,০০,০০০ টাকা

সর্বনিম্ন ৩১,৫০০ টাকা হলো তানজিবের কর রেয়াত।

করদায় নির্ণয়

করযোগ্য আয়কর হারকর (টাকা)
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত০%
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত৫%৫,০০০
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১০%৪০,০০০
অবশিষ্ট ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১৫%৩০,০০০
মোট করদায়৭৫,০০০
জমি বিক্রির উপর মূলধনী আয়২,৫০,০০০
মোট করদায়৩,২৫,০০০
বাদ: কর রেয়াত৩১,৫০০
নিট করদায়২,৯৩,৫০০
বাদ: উৎসে কর কর্তন (৫০,০০০ + ২,৫০,০০০)৩,০০,০০০
অতিরিক্ত কর প্রদেয়৬,৫০০

তানজিব ৬,৫০০ টাকা অতিরিক্ত কর দিয়েছেন, যা পরবর্তী বছরের কর রিটার্নে সমন্বয় করা যেতে পারে।

এই অধ্যায়ে আমরা মূলধনী আয় গণনার বিস্তারিত পদ্ধতি ও তার করদায় নির্ণয় সম্পর্কে জানলাম। একইভাবে ধাপে ধাপে হিসাব করলে আপনি সহজেই যেকোনো করদাতার করযোগ্য আয় ও কর নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন।


Leave a Comment

Share this Doc

মূলধনী আয় গণনা পদ্ধতি

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel