Comment

ভূমি বিষয়ক সাধারণ ধারণা

আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি থেকে দশমিক: জমি পরিমাপ ও হিসাবের সহজ পদ্ধতি

Estimated reading: 1 minute 16 views Contributors

বর্তমান সময়ে জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে আমরা দশমিক পদ্ধতিতে অভ্যস্ত। তবে পুরনো দলিল ও খতিয়ানে আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। পুরনো নথিপত্র বুঝতে গেলে এ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকা অপরিহার্য। এই টিউটোরিয়ালে আমরা আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি পদ্ধতি সম্পর্কে জানব এবং কীভাবে এগুলোকে দশমিক পদ্ধতিতে রূপান্তর করা যায় তা শিখব।

আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি পদ্ধতির পরিচিতি

এককগুলোর সম্পর্ক

  • ২০ তিল = ১ ক্রান্তি
  • ৩ ক্রান্তি = ১ কড়া
  • ৪ কড়া = ১ গণ্ডা
  • ২০ গণ্ডা = ১ আনা
  • ১৬ আনা = ১ একর

লেখার পদ্ধতি

আনা

আনা লেখার জন্য বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করা হয়। নিচে আনা লেখার পদ্ধতি দেওয়া হলো:

  • ১ আনা: /
  • ২ আনা: V
  • ৩ আনা: 12
  • ৪ আনা: 1V
  • ৫ আনা: V/
  • ৬ আনা: 12/
  • ৭ আনা: W
  • ৮ আনা: 11
  • ৯ আনা: 11/
  • ১০ আনা: 112
  • ১১ আনা: 112/
  • ১২ আনা: И
  • ১৩ আনা: И/
  • ১৪ আনা:
  • ১৫ আনা: 1И/
  • ১৬ আনা: X (পূর্ণ)

গণ্ডা

গণ্ডা সংখ্যার মাধ্যমে লেখা হয়, যেমন: ১, ২, ৩, …, ১৯।

কড়া

কড়া লেখার জন্য 1, K ইত্যাদি প্রতীক ব্যবহার করা হয়। কখনও এর নিচে একটি রেখা (¯) দেওয়া হয়।

ক্রান্তি

ক্রান্তি লেখার জন্য / প্রতীক ব্যবহার করা হয়।

তিল

তিল সংখ্যার মাধ্যমে লেখা হয় এবং নিচে দুটি বিন্দু (:) দেওয়া হয়, যেমন: ৫:

উদাহরণ

নয় আনা তিন গণ্ডা দুই কড়া দুই ক্রান্তি লিখা হবে: 11/011/1

আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি কে দশমিকে রূপান্তর করার পদ্ধতি

জমির পরিমাণ দশমিক পদ্ধতিতে বের করতে হলে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

উদাহরণ

প্রশ্ন: একটি খতিয়ানে নিম্নোক্ত ভগ্নাংশ দেওয়া আছে, যা মিলে ১৬ আনা হয়:

  1. / (১ আনা)
  2. ৯৬ গণ্ডা
  3. (১ কড়া)
  4. ১০ ক্রান্তি
  5. ৯১৪ তিল
  6. ২/১০

সমাধান:

প্রথমে সমস্ত অংশকে সর্বনিম্ন এককে (তিল) প্রকাশ করতে হবে। এরপর দশমিক মান বের করতে হবে।

  1. ১ আনা = ২০ গণ্ডা
  2. ৯৬ গণ্ডা = ৯৬ গণ্ডা
  3. ১ কড়া = ৩ ক্রান্তি = ৬০ তিল
  4. ১০ ক্রান্তি = ১০ ক্রান্তি = ২০০ তিল
  5. ৯১৪ তিল = ৯১৪ তিল

সবগুলো তিল যোগ করলে মোট তিল পাওয়া যাবে। এরপর সর্বমোট তিলকে ১৬ আনা অনুযায়ী ভাগ করে দশমিক মান নির্ণয় করতে হবে।

আধুনিক পদ্ধতিতে একরের অংশ লেখার নমুনা

  • ০.০০২৫ একর = কোয়ার্টার শতাংশ
  • ০.০০৫ একর = আধা শতাংশ
  • ০.০০৭৫ একর = পৌনে এক শতাংশ
  • ০.০১ একর = এক শতাংশ
  • ০.০১২৫ একর = সোয়া শতাংশ
  • ০.০১৫০ একর = দেড় শতাংশ
  • ০.০১৭৫ একর = পৌনে দুই শতাংশ
  • ০.০২ একর = দুই শতাংশ
  • ০.১০ একর = দশ শতাংশ
  • ১.০ একর = ১০০ শতাংশ

জমি পরিমাপের মেট্রিক ও দেশীয় পদ্ধতির তুলনা

মেট্রিক পদ্ধতি

  • ১ বর্গমিটার = ১০,০০০ বর্গসেন্টিমিটার
  • ১ হেক্টর = ১০,০০০ বর্গমিটার = ২.৪৭ একর
  • ১ কিলোমিটার = ১,০০০ মিটার

দেশীয় পদ্ধতি

  • ১ একর = ১০০ শতাংশ
  • ১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ
  • ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ (৩৩ এর মাপে)

বিভিন্ন এককে জমির পরিমাণ নির্ণয়

চেইন

  • ১ চেইন = ১০০ লিংক = ৬৬ ফুট = ২০.১২ মিটার

বর্গহাত

  • ১.৬ বর্গহাত = ১ তিল
  • ৩২ বর্গহাত = ১ ক্রান্তি
  • ৯৬ বর্গহাত = ১ কড়া
  • ৩৮৪ বর্গহাত = ১ গণ্ডা
  • ৬,৪০০ বর্গহাত = ১ বিঘা

বর্গফুট

  • ৩.৬ বর্গফুট = ১ তিল
  • ৭২ বর্গফুট = ১ ক্রান্তি
  • ২১৬ বর্গফুট = ১ কড়া
  • ৮৬৪ বর্গফুট = ১ গণ্ডা
  • ১৪,৪০০ বর্গফুট = ১ বিঘা

ইঞ্চি-ফুট-গজ ও মেট্রিক পদ্ধতির তুলনা

এককমিলিমিটারসেন্টিমিটারডেসিমিটারমিটারডেকামিটারহেক্টোমিটারকিলোমিটার
১ ইঞ্চি২৫.৪২.৫৪০.২৫০.০২৫৪
১ ফুট৩০৪.৮৩০.৪৮৩.০৪৮০.৩০৪৮০.০৩০৪৮
১ গজ৯১৪.৪৯১.৪৪৯.১৪৪০.৯১৪৪০.০৯১৪৪
১ মাইল১৬১০১৬১১৬.১০১.৬১

জমি পরিমাপের উদাহরণ

উদাহরণ ১

প্রশ্ন: আয়তাকার একটি জমির দৈর্ঘ্য ৪০০ লিংক এবং প্রস্থ ৩০০ লিংক। জমির পরিমাণ কত?

সমাধান:

  • ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ = ৪০০ লিংক × ৩০০ লিংক = ১,২০,০০০ বর্গলিংক
  • আমরা জানি, ১ শতাংশ = ১,০০০ বর্গলিংক
  • সুতরাং, জমির পরিমাণ = ১,২০,০০০ ÷ ১,০০০ = ১২০ শতাংশ = ১.২০ একর

উদাহরণ ২

প্রশ্ন: আয়তাকার একটি জমির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০ ফুট। জমিটির পরিমাণ কত?

সমাধান:

  • ক্ষেত্রফল = ৫০ ফুট × ৪০ ফুট = ২,০০০ বর্গফুট
  • আমরা জানি, ৮৬৪ বর্গফুট = ১ গণ্ডা
  • গণ্ডা = ২,০০০ ÷ ৮৬৪ ≈ ২ গণ্ডা
  • বাকি ২৭২ বর্গফুট থাকে।

বাকি বর্গফুটকে ক্রান্তি ও তিলে রূপান্তর করতে হবে।

  • ৭২ বর্গফুট = ১ ক্রান্তি
  • ক্রান্তি = ২৭২ ÷ ৭২ ≈ ৩ ক্রান্তি
  • বাকি ৫৬ বর্গফুট।
  • ৪ বর্গফুট = ১ তিল
  • তিল = ৫৬ ÷ ৪ = ১৪ তিল

সুতরাং, জমির পরিমাণ = ২ গণ্ডা ৩ ক্রান্তি ১৪ তিল।

উদাহরণ ৩

প্রশ্ন: কোন জমির উত্তর আইল ১৩০ লিংক, দক্ষিণ আইল ১৩৫ লিংক, পূর্ব আইল ১২০ লিংক ও পশ্চিম আইল ১২২ লিংক। জমিটির পরিমাণ কত?

সমাধান:

  • দৈর্ঘ্য = (উত্তর আইল + দক্ষিণ আইল) ÷ ২ = (১৩০ + ১৩৫) ÷ ২ = ১৩২.৫ লিংক
  • প্রস্থ = (পূর্ব আইল + পশ্চিম আইল) ÷ ২ = (১২০ + ১২২) ÷ ২ = ১২১ লিংক
  • ক্ষেত্রফল = ১৩২.৫ লিংক × ১২১ লিংক = ১৬,০৩২.৫০ বর্গলিংক
  • ১ শতাংশ = ১,০০০ বর্গলিংক
  • জমির পরিমাণ = ১৬,০৩২.৫০ ÷ ১,০০০ = ১৬.০৩২ শতাংশ ≈ ১৬ শতাংশ

প্রয়োজনীয় প্রশ্নাবলী

প্রশ্ন ১: আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি পদ্ধতি কেন জানা প্রয়োজন?

উত্তর: পুরনো দলিল ও খতিয়ানে জমির পরিমাণ আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি পদ্ধতিতে উল্লেখ রয়েছে। এগুলো বুঝতে হলে এ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।

প্রশ্ন ২: কিভাবে আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তিকে দশমিক পদ্ধতিতে রূপান্তর করবেন?

উত্তর: এককগুলোর সম্পর্ক জেনে সর্বনিম্ন এককে রূপান্তর করে দশমিক পদ্ধতিতে রূপান্তর করা যায়।

প্রশ্ন ৩: ১ একর কত শতাংশ?

উত্তর: ১ একর = ১০০ শতাংশ

উপসংহার

আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি পদ্ধতি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, তবে আধুনিক সময়ে দশমিক পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়। পুরনো দলিল-খতিয়ান বুঝতে এ পদ্ধতির ধারণা থাকা জরুরি। আশা করি এই টিউটোরিয়ালটি আপনার জন্য সহায়ক হবে।


Leave a Comment

Share this Doc

আনা-গণ্ডা-কড়া-ক্রান্তি থেকে দশমিক: জমি পরিমাপ ও হিসাবের সহজ পদ্ধতি

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel