Comment

ভূমি ব্যবস্থাপনা ও নামজারি

জমির মালিকানা অর্জন

Estimated reading: 1 minute 18 views Contributors

ভূমি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ভূমির মালিকানা ও এর অধিকার নিয়ে ইতিহাসে বহু পরিবর্তন হয়েছে এবং এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আমরা বর্তমান ভূমি ব্যবস্থাপনা ও নামজারির প্রক্রিয়ায় পৌঁছেছি। আজকে আমরা এর ইতিহাস এবং কীভাবে সম্পত্তি অর্জন করা যায়, তা সহজভাবে আলোচনা করবো।

ভূমি ব্যবস্থাপনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রাচীন যুগে ভূমি ব্যবস্থাপনার সূচনা হয়েছিল বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে। তখনকার দিনে যিনি জঙ্গল পরিষ্কার করতেন, তিনিই সেই জমির মালিক হতেন। হিন্দু আমলেও এই নিয়ম প্রচলিত ছিল। যারা জমি পরিষ্কার করে চাষাবাদ করতেন, তারাই জমির প্রকৃত মালিক হতেন। রাজা ফসলের একটি অংশ কর হিসেবে গ্রহণ করতেন, যা এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-ষষ্ঠাংশ পর্যন্ত হতে পারতো। তবে, রাজা কখনোই কৃষকের জমির মালিকানা দাবি করতেন না; বরং কর সংগ্রহের বিনিময়ে শাসন কার্য পরিচালনা ও শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন।

মুসলিম আমলে ভূমি ব্যবস্থাপনা মূলত হিন্দু যুগের নিয়ম অনুসরণ করেই চলতো। ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সাল পর্যন্ত আফগান শুর বংশীয় নৃপতির শাসনামলে ভূমি জরিপের প্রবর্তন করা হয়, যা ভূমি রাজস্ব নির্ধারণকে নির্ভুল ও ন্যায়সংগত করে তুলেছিল। পরবর্তীতে সম্রাট আকবরের উজির টোডরমল ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনেন।

ব্রিটিশ আমলে ভূমি রাজস্ব আদায়ই ছিল ব্রিটিশ শাসনের মূল লক্ষ্য। ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে লর্ড কর্নওয়ালিশ “চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত” প্রথা চালু করেন, যার ফলে বাংলার কৃষকরা জমির মালিকানা হারিয়ে জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে কৃষকরা পুনরায় জমির মালিকানা ফিরে পায়। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা কৃষকদের ভূমির সীমিত অধিকার প্রদান করা হয়, এবং পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা চিরতরে উচ্ছেদ করা হয়।

বর্তমানে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিম্নলিখিত উপায়ে সম্পত্তি অর্জন করতে পারে:

১. উত্তরাধিকার সূত্রে: ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইন অনুসারে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি অর্জিত হয়। মুসলিম, হিন্দু, এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা উত্তরাধিকার আইন প্রযোজ্য।

২. ক্রয়-বিক্রয় সূত্রে: সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-১৮৮২ ও ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ অনুযায়ী সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রয় করা যায়।

৩. আদালতের রায়ের মাধ্যমে: আদালতের নির্দেশে সম্পত্তির মালিকানা অর্জিত হতে পারে।

৪. অন্যান্য উপায়ে হস্তান্তর: ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইন ও সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সম্পত্তি হস্তান্তর হতে পারে—

  • লীজ/ইজারা
  • বিনিময় (Exchanges)
  • দান (Gift)
  • উইল (Will)
  • হেবা-বিল এওয়াজ (Heba-Bill-Ewaz)
  • ওয়াকফ (Wakf)
  • দেবোত্তর সম্পত্তি

    গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী

    প্রশ্ন ১: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা কী এবং এটি কীভাবে কৃষকদের উপর প্রভাব ফেলেছিল?

    উত্তর: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা ছিল লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রবর্তিত একটি ব্যবস্থা, যেখানে জমিদারদের স্থায়ীভাবে ভূমির কর সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে কৃষকরা জমির মালিকানা হারিয়ে জমিদারদের অধীনস্থ হয়ে পড়েন।

    প্রশ্ন ২: জমিদারি প্রথা কবে এবং কীভাবে উচ্ছেদ হয়?

    উত্তর: ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয় এবং কৃষকরা জমির মালিকানা ফিরে পান।

    প্রশ্ন ৩: সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় কোন কোন আইন অনুসরণ করতে হয়?

    উত্তর: সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এবং ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর বিধান অনুসরণ করতে হয়।

    প্রশ্ন ৪: হেবা-বিল-এওয়াজ কী?

    উত্তর: হেবা-বিল-এওয়াজ মুসলিম আইনে বিনিময়মূলক দান, যেখানে দাতার কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করা হয়।

    ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস এবং বর্তমানে সম্পত্তি অর্জনের নিয়মাবলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা প্রত্যেক নাগরিকেরই কর্তব্য। এটি আমাদের শুধু আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে না, বরং আমাদের সম্পত্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়নেও সহায়ক হয়।

    Leave a Comment

    Share this Doc

    জমির মালিকানা অর্জন

    Or copy link

    CONTENTS

    Subscribe

    ×
    Cancel