জমির মালিকানা অর্জন আউল এবং রদ্দি কী? Estimated reading: 1 minute 11 views Contributors মুসলিম পারিবারিক আইনে সম্পত্তি বণ্টনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি রয়েছে— আউল (বৃদ্ধিকরণ) এবং রদ্দি (ফেরত )। চলুন ইসলামি ইতিহাস থেকে জেনে নিই শব্দ দুটি কীভাবে এলো ।ইতিহাসএকদিন উমরের শাসনকালে একজন মহিলার মৃত্যু হয়। তিনি স্বামী ও দুই বোন রেখে গিয়েছিলেন। ইসলামী উত্তরাধিকার আইন অনুসারে, এই অবস্থায় স্বামী পাবেন এক-অর্ধাংশ এবং দুই বোন পাবেন দুই-তৃতীয়াংশ। কিন্তু এই হিসেবটি সমস্যার সৃষ্টি করল। যদি স্বামীকে এক-অর্ধাংশ দেয়া হয়, তবে দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ বাকি থাকবে না, এবং যদি দুই বোনকে তাদের অংশ দেয়া হয়, তবে স্বামীর এক-অর্ধাংশ সম্পূর্ণভাবে দেয়া সম্ভব হবে না।খলিফা উমর এই জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার জন্য বিশিষ্ট সাহাবিদের একত্রিত করলেন। তিনি তাদের সামনে কোরআনের নির্দেশগুলো উপস্থাপন করে বলেন, “আল্লাহ স্বামীর জন্য এক-অর্ধাংশ এবং দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এখন আমি কীভাবে এই সম্পদ বণ্টন করব? যদি স্বামীর অংশ দিয়ে শুরু করি, তবে দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ থাকবে না, আর যদি দুই বোনকে আগে দেই, তাহলে স্বামীর জন্য তার প্রাপ্য অংশ থাকবে না। আমাকে পরামর্শ দিন।”সাহাবিরা নীরবে ভাবলেন। কিছু সাহাবি প্রস্তাব করলেন যে ‘আউল’ নামক একটি সমাধান প্রয়োগ করা যেতে পারে। ‘আউল’-এর মূল ধারণা ছিল, সম্পত্তি কম হলে উত্তরাধিকারীদের প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশ সমানভাবে কমিয়ে সম্পদ বণ্টন করা।আউলআউল শব্দের অর্থ বৃদ্ধি। আউল একটি বিশেষ পদ্ধতি যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংশভোগীদের প্রাপ্য অংশ সমন্বয় করা হয়। যখন উত্তরাধিকারীদের নির্ধারিত অংশগুলোর যোগফল সম্পত্তির মোট পরিমাণ একক (১) বা সম্পূর্ণ মূল্যের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন সকল অংশীদারের প্রাপ্য অংশকে আনুপাতিক হারে কমিয়ে আনতে হয় যাতে প্রত্যেক অংশীদার তার অংশ পেতে পারেন। এই প্রক্রিয়া মূলত সকলের মধ্যে আনুপাতিক সমতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। উল্লেখ্য যে, আউল কেবল তখনই ঘটে যখন স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকে।উদাহরণস্বরূপ: ধরুন মৃত ব্যক্তির স্বামী, বোন, এবং বৈমাত্রেয় বোন রয়েছেন। তাদের প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ করার সময় দেখা যায়: স্বামী: ১/২ = ৩/৬, কমিয়ে ৩/৭ বোন: ১/২ = ৩/৬, কমিয়ে ৩/৭ বৈমাত্রেয় বোন: ১/৬ = ১/৬, কমিয়ে ১/৭ এই প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধিকরণ বা আউল বলা হয়। এখানে অংশীদারদের প্রাপ্য অংশ কমিয়ে সবার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে যাতে মোট অংশের সমতা থাকে। এটি সম্পত্তির প্রাপ্তি প্রকৃতপক্ষে পূর্বাপেক্ষা কমিয়ে দেয়, তবে সকলের অংশ পাওয়া নিশ্চিত করে।রদ্দিরদ্দি অর্থ ফেরত। রদ্দি একটি পদ্ধতি যেখানে নির্দিষ্ট অংশভোগীদের প্রাপ্য অংশ প্রদান করার পর যদি সম্পত্তির কিছু অংশ উদ্বৃত্ত থাকে এবং কোনো অবশিষ্টাংশভোগী (রেসিডুয়ারী) না থাকে, তখন সেই উদ্বৃত্ত অংশ নির্দিষ্ট অংশভোগীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ফেরত দেওয়া হয়। তবে, যদি স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকেন এবং অন্য কোনো উত্তরাধিকারী না থাকেন, সেক্ষেত্রে সেই উদ্বৃত্ত অংশ তারা পাবেন না।উদাহরণস্বরূপ, ১. স্বামী ও মাতা বেঁচে থাকলে: স্বামী: ১/২ মাতা: ১/২ = ৩/৬, কমিয়ে ৩/৭ ২. স্বামী, মাতা ও কন্যা বেঁচে থাকলে: স্বামী: ১/৪ মাতা: ১/৬ বৃদ্ধি করে ৩/৪ এর ১/৪ = ৩/১৬ কন্যা: ১/২ = ৩/৬ বৃদ্ধি করে ৩/৪ এর ৩/৪ = ৯/১৬আউল ও রদ্দি আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে নিচের উদাহরণটি পড়ুন। উদাহরণ:একটি রুটিকে মোট ৮ টি টুকরো করুন। যদি ১/৮ করে ভাগ করার পরে দেখা যায়, নবম বা দশম মানুষ এসে যুক্ত হয়, তাহলে শেষে যুক্ত হওয়া ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা আর কোন রুটির অংশ পাবেন না। কারণ ১/৮ করে টুকরো করা রুটিকে ৮ জনার বেশী মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেয়া যাবে না। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে মোট যোগফল ১ হতে হবে। সেই সময়ে মোট টুকরোগুলোর ভগ্নাংশের যোগফল যদি ১ এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে ১ এর বেশী হয়ে যাওয়া অংশটুকু আর কাউকে দেয়া যাবে না। আসুন ৮ জনের মধ্যে ভাগ করে দিলে যোগফল কেমন হবে দেখে নিই,১/৮ + ১/৮ + ১/৮ + ১/৮ + ১/৮ + ১/৮ +১/৮ + ১/৮ = ১এবার ধরুন, ৯ জন ব্যক্তির মধ্যে সেই একই রুটি, যেটি ১/৮ অংশে ভাগ করা হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে ভাগ করার চেষ্টা করা হল। যেহেতু রুটির ৮টি টুকরো আছে, ৯ জনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা সম্ভব হবে না। শেষ ব্যক্তি রুটি থেকে বঞ্চিত হবে। অথবা অন্য সকলের অংশ কমিয়ে দিয়ে সেই অংশটি তাকে দিতে হবে। কিন্তু অন্যদের অংশ কমিয়ে দিলে, তাদের অংশ আর ১/৮ থাকবে না। তাদের অংশ কিছুটা হ্রাস পাবে। এই প্রক্রিয়াটি হলো আউল। অপরদিকে, রুটিটি ৯ টুকরো করলে যদি ৮ জন অংশীদার থাকে, তবে বাকি ১ টুকরো ৮ জনের মধ্যেই আবার সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সবার রুটির পরিমাণ ১/৮ অংশ না হয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। এই প্রক্রিয়াটি হলো রদ্দি। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী প্রশ্ন ১: স্বামী বা স্ত্রী কি ফেরত অংশ পাবেন? উত্তর: স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো অংশীদার থাকলে তারা ফেরত অংশ পাবেন না। তবে যদি অন্য কোনো অংশীদার না থাকে, তাহলে তারা ফেরত অংশ পাবেন। প্রশ্ন ২: বৃদ্ধিকরণের ফলে কি সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়? উত্তর: না, বৃদ্ধিকরণের ফলে সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। বরং অংশীদারদের প্রাপ্তির পরিমাণ কমে যায়। জমির মালিকানা অর্জন - Previous সম্পত্তি বন্টনের অন্যান্য নিয়মাবলি Next - জমির মালিকানা অর্জন হিন্দু উত্তরাধিকারী আইন