জমির মালিকানা অর্জন উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি অর্জন Estimated reading: 1 minute 11 views Contributors মুসলিম উত্তরাধিকার আইন:কোনো মুসলমান ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির বণ্টন তার ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য মুসলিম উত্তরাধিকার আইন এই বণ্টন প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনের মূল উৎস হলো কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস। নিচে উৎসগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।১. কোরআনকোরআন হলো ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহর বাণী হিসেবে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাজিল হয়েছিল। এতে মোট ৬,৬৬৬টি আয়াত এবং ১১৪টি সুরা রয়েছে। উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয়ে কোরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।২. সুন্নাহসুন্নাহ হলো হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী, কর্ম এবং অনুমোদিত কাজসমূহের সমষ্টি। সুন্নাহ একটি আরবি শব্দ যার অর্থ ঐতিহ্য ও উপায়।মুসলিমদের কাছে সুন্নাহ হলো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দ্বারা জীবনব্যবস্থা। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, রাসুলুল্লাহর জীবন হলো সর্বোত্তম আদর্শ , যা তাদের নিজেদের জীবনে অনুসরণ করা উচিত। সুন্নাহকে হাদিসও বলা হয়, যা তিন প্রকার:হাদিস কওলী: রাসুল (সাঃ)-এর বাণী। হাদিস ফেলী: রাসুল (সাঃ)-এর কাজ। হাদিস তাকরীরী: রাসুল (সাঃ)-এর মৌন সম্মতি।৩. ইজমাইজমা হলো ইসলামী আইনজীবী ও চিন্তাবিদদের ঐক্যমত। যখন কোনো বিষয়ে কোরআন ও সুন্নাহতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকে না, তখন ইজমার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়।৪. কিয়াসকিয়াস হলো যুক্তিসঙ্গত অনুমান বা বিশ্লেষণ। কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমার পর কিয়াসের মাধ্যমে নতুন সমস্যার সমাধান করা হয়।মুসলিম আইনের প্রয়োগবাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে কোর্ট কর্তৃক মুসলিম আইন প্রয়োগ করা হয় না। ১৯৩৭ সালের শরিয়ত আইন অনুসারে নিম্নলিখিত বিষয়ে মুসলিম আইন প্রযোজ্য:বিবাহ দেনমোহর তালাক দান বা হেবা অভিভাবকত্ব ওয়াকফ উইল উত্তরাধিকার খোরপোশনোট: মুসলিম ফৌজদারি আইন এবং সাক্ষ্য আইন বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়।বণ্টনযোগ্য সম্পত্তিকোনো মুসলমান ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে নিম্নোক্ত ব্যয়সমূহ পরিশোধ করা হয়:দাফন-কাফন ও মৃত্যুশয্যাকালীন খরচ মৃত্যুর তিন মাস পূর্ব পর্যন্ত সেবা-শুশ্রূষার খরচ ঋণ পরিশোধ উইল বা উইলের খরচ প্রবেট বা সাকসেশন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত ব্যয়উপরোক্ত ব্যয়সমূহ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে ওয়ারিশদের শ্রেণীবিন্যাসমুসলিম আইনে ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীগণ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত:১. শেয়ার বা অংশীদার (যাবিল ফুরুজ)যাদের সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট অংশ কোরআনে নির্ধারিত আছে। যেমন:পিতা মাতা স্বামী/স্ত্রী কন্যা দাদা দাদীঅংশীদারদের তালিকামোট ১২ জন অংশীদার রয়েছে:পিতা স্বামী স্ত্রী মাতা কন্যা দাদা দাদী পুত্রের কন্যা বৈপিত্রেয় ভাই বৈপিত্রেয় বোন সহোদর বোন বৈমাত্রেয় বোনবিঃদ্রঃ প্রথম ৫ জন সবসময় সম্পত্তি পাবেন। পরবর্তী ৩ জন পূর্ববর্তী ৫ জনের বিকল্প হিসেবে কাজ করেন। শেষ ৪ জন সন্তান ও পিতা থাকলে সম্পত্তি পাবেন না।ওয়ারিশদের সম্পত্তির অংশ নির্ধারণউদাহরণ ১কোনো ব্যক্তি মৃত্যুকালে নিম্নোক্ত ওয়ারিশ রেখে গেছেন:পিতা মাতা দুই কন্যাসম্পত্তি বণ্টন:পিতা: ১/৬ (কন্যা থাকায়) মাতা: ১/৬ (কন্যা থাকায়) দুই কন্যা: ২/৩ (সমান ভাগে)উদাহরণ ২কোনো ব্যক্তি মৃত্যুকালে নিম্নোক্ত ওয়ারিশ রেখে গেছেন:পিতা মাতা এক কন্যা পুত্রের চার কন্যাসম্পত্তি বণ্টন:পিতা: ১/৬ (সন্তান বর্তমান) মাতা: ১/৬ (সন্তান বর্তমান) এক কন্যা: ১/২ পুত্রের চার কন্যা: ১/৬ (প্রত্যেকে ১/২৪ অংশ)উদাহরণ ৩মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ:মাতা সহোদর বোন পিতাসম্পত্তি বণ্টন:মাতা: ১/৩ (সন্তান নেই, এক বোন আছে) বোন: পিতার কারণে বঞ্চিত পিতা: অবশিষ্ট ২/৩ (অংশীদার ও রেসিডুয়ারী)উদাহরণ ৪মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ:পিতার মাতা (দাদী) মাতার মাতা (নানী) পিতার পিতা (দাদা)সম্পত্তি বণ্টন: এই ক্ষেত্রে বিস্তারিত হিসাব প্রয়োজন।উদাহরণ ৫কোনো মৃত ব্যক্তির পিতা, মাতা, স্ত্রী এবং সন্তান জীবিত থাকলে তাদের সম্পত্তি বণ্টন:পিতা: ১/৬ (কন্যা থাকায়) মাতা: ১/৬ (কন্যা থাকায়) স্ত্রী: ১/৮অবশিষ্ট সম্পত্তি: ১ – (১/৬ + ১/৬ + ১/৮) = ১৩/২৪ অংশসন্তানদের মধ্যে বণ্টন:এক পুত্র: ১৩/২৪ এর দ্বিগুণ অংশ দুই পুত্র: সমানভাবে ভাগ করবে এক কন্যা: ১৩/২৪ এর একগুণ অংশ দুই কন্যা: সমানভাবে ভাগ করবেগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী প্রশ্ন ১: মুসলিম উত্তরাধিকার আইন কাদের জন্য প্রযোজ্য? উত্তর: মুসলিম উত্তরাধিকার আইন শুধুমাত্র মুসলিম ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। প্রশ্ন ২: কোন কোন ক্ষেত্রে মুসলিম আইন প্রযোজ্য নয়? উত্তর: মুসলিম ফৌজদারি আইন এবং সাক্ষ্য আইন বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়। প্রশ্ন ৩: ওয়ারিশদের মধ্যে অংশীদার কারা? উত্তর: সম্পত্তিতে যাদের নির্দিষ্ট অংশ কোরআনে নির্ধারিত আছে, তারা অংশীদার। যেমন পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী, কন্যা ইত্যাদি। প্রশ্ন ৪: পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অংশ কীভাবে নির্ধারিত হয়? উত্তর: পুত্র কন্যার দ্বিগুণ অংশ পায়। অর্থাৎ, এক পুত্র এবং এক কন্যা থাকলে পুত্র ২/৩ এবং কন্যা ১/৩ অংশ পাবে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন সম্পত্তি বণ্টনের একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রদান করে, যা কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই আইন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Next - জমির মালিকানা অর্জন রেসিডুয়ারি বা পরিত্যক্ত অংশভোগী