Comment

জমির মালিকানা অর্জন

দূর সম্পর্কের আত্মীয় (যাবিল আরহাম)

Estimated reading: 1 minute 6 views Contributors

দ্বিতীয় অধ্যায়ের এই অংশে আমরা আলোচনা করবো ‘দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের’ ভূমিকা নিয়ে, যাদের সাধারণত ‘যাবিল আরহাম’ বলা হয়। যখন কোনো অংশীদার বা রেসিডুয়ারী উপস্থিত থাকে না, তখন এই দূর সম্পর্কের আত্মীয়গণ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকারী হন। এখানে সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিভাবে এবং কোন নিয়মে এই দূর সম্পর্কের আত্মীয়গণ সম্পত্তি পেয়ে থাকেন।

দূর সম্পর্কের আত্মীয় কারা?

দূর সম্পর্কের আত্মীয় হচ্ছেন সেই আত্মীয়রা যারা সরাসরি অংশীদার বা রেসিডুয়ারী না হলেও রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্পত্তির অধিকারী হন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—ভাগ্নি, ভাতিজি, চাচাতো বোন ইত্যাদি। নিচে দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:

১. কন্যার সন্তানগণ এবং তাদের বংশধরগণ

২. পুত্রের কন্যা ও তদনিম্নবর্তী এবং তাদের বংশধরগণ

৩. ফলস্ গ্রান্ড ফাদার ও তদূর্ধ্বগণ

৪. ফলস্ গ্রান্ড মাদার ও তদূর্ধ্বগণ

৫. আপন ভাইয়ের কন্যাগণ এবং তাদের বংশধরগণ

৬. বৈমাত্রীয় ভাইয়ের কন্যাগণ এবং তাদের বংশধরগণ

৭. বৈপিত্রেয়ী ভাইয়ের কন্যাগণ এবং তাদের বংশধরগণ

৮. আপন ভাইয়ের পুত্রের কন্যাগণ এবং তাদের বংশধরগণ

৯. বৈমাত্রীয় ভাইয়ের পুত্রের কন্যাগণ এবং তাদের বংশধরগণ

১০. আপন/বৈমাত্রীয় বৈপিত্রীয় বোনের সন্তান এবং তাদের বংশধরগণ

দূর সম্পর্কের আত্মীয়গণ কিভাবে সম্পত্তি পাবে?

দূর সম্পর্কের আত্মীয়গণ সম্পত্তি পাবে কিনা তা নির্ভর করে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের ওপর। এই নিয়মগুলো হলো:

১. দূরবর্তী আত্মীয় নিকটবর্তী আত্মীয় দ্বারা বঞ্চিত হবে: অর্থাৎ, যদি কোনো নিকটবর্তী আত্মীয় থাকে, তবে দূরবর্তী আত্মীয় সম্পত্তির অধিকারী হতে পারবে না।

২. অংশীদারের দূরবর্তী আত্মীয় রেসিডুয়ারির দূরবর্তী আত্মীয়কে বঞ্চিত করবে: অর্থাৎ, অংশীদারের আত্মীয়রা রেসিডুয়ারি আত্মীয়দের তুলনায় অগ্রাধিকার পাবে।

৩. সমশ্রেণীর নারী ও পুরুষের মধ্যে বণ্টন: যদি মৃত ব্যক্তি এবং উত্তরাধিকারীর মধ্যে মধ্যবর্তী কোনো আত্মীয় বেঁচে থাকে, তবে নারী পুরুষের অর্ধেক পাবে। অর্থাৎ, সমশ্রেণীর নারী ও পুরুষদের মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন হবে নারী পুরুষের অনুপাতে।

সম্পদ বণ্টনের সাধারণ নিয়ম

১. অংশীদারদের জন্য নির্ধারিত অংশ প্রদান:

বণ্টনযোগ্য সম্পদ থেকে প্রথমে অংশীদারগণকে তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ প্রদান করা হবে। যদি কোনো সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে, তবে তা রেসিডুয়ারিগণের মধ্যে ভাগ করা হবে। যদি অংশীদার বা রেসিডুয়ারি না থাকে, তবে সেই সম্পত্তি দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়গণের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে।

২. মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের নীতি:

  • নিকটবর্তী আত্মীয় বেঁচে থাকলে দূরবর্তী আত্মীয় সম্পত্তি পাবে না: যেমন, পিতা বেঁচে থাকলে ভাই সম্পত্তি পাবে না।
  • একই শ্রেণীর মধ্যে নিকটবর্তী আত্মীয় অগ্রাধিকার পাবে: যেমন, পিতার কারণে দাদা সম্পত্তি পাবে না। তবে কন্যার কারণে ভাইয়ের ছেলে বঞ্চিত হয় না।
  • পাঁচজন উত্তরাধিকারী কখনো বঞ্চিত হবে না: সন্তান (পুত্র এবং কন্যা), পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী—এদেরকে প্রাথমিক উত্তরাধিকারী বলা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের বিকল্প উত্তরাধিকারী রয়েছে—সন্তানের সন্তান, দাদা, দাদী অথবা নানী। স্বামী ও স্ত্রীর কোনো বিকল্প উত্তরাধিকারী নেই।
  • প্রাথমিক উত্তরাধিকারী থাকলে তার বিকল্প উত্তরাধিকারী সম্পত্তি পাবে না: যেমন, পুত্র না থাকলে কন্যা ১/২ অংশ এবং পুত্রের কন্যা ১/৬ অংশ পাবে।
  • সমপর্যায়ের নারী পুরুষের মধ্যে বণ্টন: সাধারণত সমপর্যায়ের নারী পুরুষের অর্ধেক পাবে। যেমন, কন্যা পুত্রের অর্ধেক পাবে।
  • দুটি কারণে একজন উত্তরাধিকারী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়: যদি সে যার সম্পত্তি বণ্টন হচ্ছে তাকে হত্যা করে অথবা ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে।

এ্রই অংশে ‘দূর সম্পর্কের আত্মীয়’ এবং তাদের সম্পত্তি প্রাপ্তির নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি  এটি পড়ার মাধ্যমে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা কিছুটা হলেও নিরসন হয়েছে। 


Leave a Comment

Share this Doc

দূর সম্পর্কের আত্মীয় (যাবিল আরহাম)

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel