Comment

জমির মালিকানা অর্জন

রেসিডুয়ারি বা পরিত্যক্ত অংশভোগী

Estimated reading: 1 minute 5 views Contributors

রেসিডুয়ারি (Residuary) হলেন সেই উত্তরাধিকারীরা, যাদেরকে মূল অংশীদারদের অংশ বণ্টনের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি প্রদান করা হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, একজন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে নির্দিষ্ট অংশীদারদের অংশ বণ্টন করার পর যা অবশিষ্ট থাকে, তা রেসিডুয়ারি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হয়।

ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে, রেসিডুয়ারি হতে পারেন মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, ভাই, বোন, পিতা ইত্যাদি। রেসিডুয়ারি উত্তরাধিকারীদের মূল কাজ হলো, অন্যান্য অংশীদারদের নির্দিষ্ট অংশ বণ্টনের পর বাকি সম্পত্তি গ্রহণ করা। তারা সাধারণত রেসিডুয়ারি হবার সময় সম্পত্তির সম্পূর্ণ বা আংশিক অধিকার পান, যা অন্য কোনো নির্দিষ্ট অংশীদারের প্রাপ্য নয়।

রেসিডুয়ারীদের প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়—

১. নিজের অধিকার: রেসিডুয়ারী তালিকাভুক্ত সকলে, যারা নিজের অধিকার অনুযায়ী অবশিষ্ট সম্পত্তি পেয়ে থাকে। যেমন পুত্র, ভাই, চাচাতো ভাই ইত্যাদি।

২. অন্যের কারণে রেসিডুয়ারী হওয়া: কিছু আত্মীয় নির্দিষ্ট শর্তের কারণে রেসিডুয়ারী হন। যেমন—

  • পুত্রের বর্তমানে কন্যা,
  • নাতি (পুত্রের পুত্র) এর বর্তমানে নাতির কন্যা,
  • ভাইয়ের বর্তমানে বোন ইত্যাদি।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে অন্যের কারণে তাদের রেসিডুয়ারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৩. অন্যের সাথে রেসিডুয়ারী হওয়া: কিছু ক্ষেত্রে আত্মীয়দের রেসিডুয়ারী হিসেবেও অংশ পেতে হয়, যখন তারা অন্য আত্মীয়দের সাথে বর্তমান থাকেন। যেমন—মৃতের বোন এবং বৈমাত্রেয় বোন, মৃতের কন্যা এবং পুত্রের কন্যা যখন একসাথে বর্তমান থাকেন।

রেসিডুয়ারীদের শ্রেণিবিভাগ

উত্তরাধিকারের ক্রমানুসারে রেসিডুয়ারীগণকে চার ভাগে ভাগ করা যায়:

১. বংশধর: পুত্র এবং পুত্রের পুত্র (নাতি)। তারা সরাসরি মৃত ব্যক্তির বংশধর হওয়ায় প্রথম শ্রেণীর রেসিডুয়ারী হিসেবে গণ্য হন।

২. উপরের বংশধর: পিতা এবং দাদা। তারা মৃত ব্যক্তির পরিবারের ঊর্ধ্বতন ওয়ারিশ এবং তারা রেসিডুয়ারী হিসেবেও সম্পত্তি পেতে পারেন।

৩. পিতার নিম্নবর্তী বংশধর: ভাই, বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, ভাইয়ের ছেলে, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে ইত্যাদি। তারা পিতার অধস্তন সদস্য বা আত্মীয় হিসেবে সম্পত্তির দাবিদার।

৪. দাদার নিম্নবর্তী বংশধর: চাচা, বৈমাত্রেয় চাচা, চাচার ছেলে, বৈমাত্রেয় চাচার ছেলে ইত্যাদি। এরা দাদার নিম্নবর্তী বংশধর হিসেবে সম্পত্তির ভাগ পেতে পারেন।

রেসিডুয়ারী হিসেবে সম্পত্তি প্রাপ্তির উদাহরণ

উদাহরণ-১

একজন ব্যক্তি মৃত্যুকালে তিন ধরনের ওয়ারিশ রেখে গেছেন—বিধবা স্ত্রী, পুত্র, এবং কন্যা। তাদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন হবে এইভাবে:

  • বিধবা স্ত্রী: ১/৮ অংশ।
  • অবশিষ্ট: ৭/৮ অংশ।
  • কন্যা: ৭/২৪ অংশ।
  • পুত্র: ৭/১২ অংশ।

এই উদাহরণটি থেকে বোঝা যায় যে, বিধবা স্ত্রী তার নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে যাওয়ার পর, অবশিষ্ট সম্পত্তি কন্যা এবং পুত্রের মধ্যে বণ্টিত হয়।

উদাহরণ-২
কোনো ব্যক্তি মৃত্যুকালে চার ধরনের ওয়ারিশ রেখে গেছেন—স্বামী, মাতা, ভাই, এবং বোন। তাদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন হবে এইভাবে:

  • স্বামী: ১/২ অংশ (সন্তান না থাকলে)।
  • মাতা: ১/৬ অংশ।
  • অবশিষ্ট: ১/৩ অংশ।
  • ভাই: ২/৯ অংশ।
  • বোন: ১/৯ অংশ।

এখানে দেখা যাচ্ছে যে, স্বামী এবং মাতা তাদের নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে যাওয়ার পর, অবশিষ্ট সম্পত্তি ভাই এবং বোনের মধ্যে বণ্টিত হয়।

উদাহরণ-৩
কোনো ব্যক্তি মৃত্যুকালে দুজন ওয়ারিশদার রেখে গেছেন—কন্যা এবং পিতা। তাদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন হবে এইভাবে:

  • কন্যা: ১/২ অংশ।
  • অবশিষ্ট: ১/২ অংশ।
  • পিতা: ১/৬ অংশ অংশীদার হিসেবে এবং বাকি ১/৩ অংশ রেসিডুয়ারী হিসেবে।

এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, পিতা নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে যাওয়ার পর রেসিডুয়ারী হিসেবেও অবশিষ্ট সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকেন।


এই অংশে আপনারা জানলেন রেসিডুয়ারী বা পরিত্যক্ত অংশীদারদের সম্পর্কে, তাদের সম্পত্তি পাওয়ার পদ্ধতি এবং কিভাবে অংশীদারদের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি তাদের মধ্যে বণ্টিত হয়। পরবর্তী অংশে আলোচনা করেছি দূর সম্পর্কে আত্মীয়ের সম্পত্তির অর্জন প্রক্রিয়া।


Leave a Comment

Share this Doc

রেসিডুয়ারি বা পরিত্যক্ত অংশভোগী

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel