Comment

অন্যান্য ও বিশেষ আয়

অন্যান্য উৎস থেকে আয় আয়কর রিটার্নে দেখাবেন কিভাবে?

Estimated reading: 1 minute 28 views Contributors

আয়কর রিটার্নে দশটি আয়ের খাত উল্লেখ রয়েছে, যার মধ্যে নয়টি নির্দিষ্ট এবং একটি হলো “অন্যান্য উৎস থেকে আয়”। নির্দিষ্ট নয়টি আয়ের খাত নিম্নরূপ:

  1. বেতনভিত্তিক আয় (Salary Income):
    • মূল বেতন
    • বোনাস
    • বাড়িভাড়া ভাতা
    • চিকিৎসা ভাতা
    • বিশেষ ভাতা
    • অন্যান্য বেতন সম্পর্কিত সুবিধা
  2. সিকিউরিটিজের উপর সুদ আয় (Interest on Securities):
    • সরকারি সিকিউরিটিজ থেকে প্রাপ্ত সুদ
    • বন্ড ও ডিবেঞ্চার থেকে প্রাপ্ত সুদ
  3. বাড়িভাড়া থেকে আয় (Income from House Property):
    • বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয়
    • ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য আয়
  4. কৃষিজ আয় (Agricultural Income):
    • ফসল উৎপাদন থেকে আয়
    • কৃষিজ পণ্য বিক্রয় থেকে আয়
  5. ব্যবসা বা পেশা থেকে আয় (Income from Business or Profession):
    • ব্যবসায়িক লাভ
    • পেশাগত ফি বা সম্মানী
    • পার্টনারশিপ ফার্ম থেকে প্রাপ্ত আয়
  6. ক্যাপিটাল গেইনস (Capital Gains):
    • সম্পদ বিক্রয় থেকে লাভ
    • শেয়ার ও সিকিউরিটিজ বিক্রয় থেকে লাভ
  7. বিদেশী আয় (Foreign Income):
    • বিদেশে অর্জিত আয়
    • প্রবাসী আয়
  8. করমুক্ত আয় (Exempted Income):
    • কর আইনে নির্ধারিত করমুক্ত আয়ের খাতসমূহ
    • যেমন, শিক্ষাবৃত্তি, গ্র্যাচুইটি, পেনশন ইত্যাদি
  9. বিনিয়োগ থেকে আয় (Income from Investments):
    • মিউচুয়াল ফান্ড থেকে আয়
    • ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ থেকে আয়
  10. অন্যান্য উৎস থেকে আয় (Income from Other Sources):
    • ব্যাংক ডিপোজিটের সুদ
    • রয়্যালটি
    • লটারি বা পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত আয়
    • উপহার বা দান থেকে প্রাপ্ত আয়

উপরে উল্লিখিত খাতগুলোর মধ্যে প্রথম নয়টি নির্দিষ্ট আয়ের খাতে আপনার আয় অন্তর্ভুক্ত না হলে, সেটি অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে। এখন আলোচনা করব আয়কর রিটার্নে কীভাবে অন্যান্য উৎস থেকে আয় দেখাবেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।

টিউশনির আয় কিভাবে দেখাবেন?

যদি আপনি চাকরির পাশাপাশি টিউশনি করে বাড়তি আয় করেন, তাহলে সেই আয় অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একজন শিক্ষক এবং টিউশনি থেকে বার্ষিক ১,০০,০০০ টাকা আয় করেছেন।

উৎসে কর কর্তন ও আপনার আয়

অনেক ক্ষেত্রে, অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর উৎসে কর কর্তন করা হয়। যেমন:

  • আপনি পত্রিকা বা জার্নালে লিখে বছরে ১,০০,০০০ টাকা আয় করেছেন।
  • এখানে প্রতিষ্ঠান আপনার থেকে ১০% কর কর্তন করে, অর্থাৎ ১০,০০০ টাকা।
  • আপনি হাতে পাবেন ৯০,০০০ টাকা।

মনে রাখবেন, আপনার আয় কিন্তু ১,০০,০০০ টাকা। রিটার্নে পুরো টাকাই আয় হিসেবে দেখাতে হবে।

উৎসে কর কর্তনের প্রভাব

করদাতার আয়ের ওপর যেখানেই উৎসে কর কর্তন হয়েছে, সেই করের পরিমাণ করদায় থেকে বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ:

  1. মোট করদায় নির্ণয় করুন।
  2. কর রেয়াত বাদ দিন (যদি থাকে)।
  3. নিট করদায় থেকে উৎসে কর কর্তন করা পরিমাণ বাদ দিন।
  4. অবশিষ্ট করদায় থাকলে তা চালানের মাধ্যমে জমা দিন।

প্রমাণপত্র: উৎসে কর কর্তনের প্রমাণ হিসেবে চালানের কপি বা সার্টিফিকেট রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

ব্যাংক সুদের ক্ষেত্রে কর কর্তন

  • ব্যাংক এফডিআর বা সঞ্চয়ী হিসাবে সুদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাংক উৎসে কর কর্তন করে।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্টে সুদ এবং কর কর্তনের পরিমাণ উল্লেখ থাকে।
  • এই তথ্য ব্যবহার করে রিটার্নে আয় ও কর প্রদর্শন করতে হবে।

অন্যান্য উৎস থেকে আয়ের বিশেষ ক্ষেত্র

আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৬৭ অনুযায়ী কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আয় অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে।

১. সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না থাকা কোনো অংকের ক্রেডিট

  • করদাতার ব্যাংক বিবরণীতে যদি কোনো অংকের ক্রেডিট দেখা যায় এবং এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, তাহলে সেই অংক অন্যান্য উৎস থেকে আয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে।

উদাহরণ: আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫,০০,০০০ টাকার একটি জমা রয়েছে, যার ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। এটি অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে।

২. অসামাঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ বা ব্যয়

  • করদাতার সম্পদ বৃদ্ধি বা ব্যয় আয়ের তুলনায় বেশি হলে সেই পার্থক্য অন্যান্য উৎস থেকে আয়ে যোগ হবে।

উদাহরণ: আপনার সম্পদ ও ব্যয় মোট ১৭,০০,০০০ টাকা, কিন্তু আয় ১৫,০০,০০০ টাকা। বাকি ২,০০,০০০ টাকা আয়ের উৎস না থাকায় এটি অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে গণ্য হবে।

৩. সেলামি বা প্রিমিয়াম থেকে আয়

  • লিজ বা ভাড়ার মাধ্যমে সেলামি বা প্রিমিয়াম হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে।

উদাহরণ: আপনি শোরুম ভাড়া দিয়ে এককালীন ২,৫০,০০০ টাকা সেলামি পেয়েছেন। এটি আপনার অন্যান্য উৎস থেকে আয়।

৪. ঋণ মওকুফ

  • করদাতা যদি কোনো ঋণ মওকুফ পান, তাহলে সেই পরিমাণ অর্থ অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে।

৫. লটারি বা খেলায় জয়লাভ

  • লটারি, শব্দজট, অনলাইন গেম ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত অর্থ অন্যান্য উৎস থেকে আয়।

৬. নগদে মূলধন পরিশোধ

  • কোম্পানিতে নগদে মূলধন পরিশোধ করলে সেই পরিমাণ অর্থ অন্যান্য উৎস থেকে আয়।

উদাহরণ: আপনি নগদে ১০,০০,০০০ টাকা মূলধন হিসেবে দিয়েছেন। এটি আপনার আয় হিসেবে গণ্য হবে।

৭. নগদে ৫ লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ

  • ক্রসড চেক বা ব্যাংক ট্রান্সফার ছাড়া নগদে ৫,০০,০০০ টাকার বেশি গ্রহণ করলে সেটি আয় হিসেবে গণ্য হবে।

উদাহরণ: আপনি নগদে ৬,০০,০০০ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এটি আপনার অন্যান্য উৎস থেকে আয়।

বিশেষ বিবেচনা: স্বামী/স্ত্রী, পিতা-মাতা বা সন্তানের কাছ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা নিলে এটি প্রযোজ্য নয়।

৮. বাকিতে নির্মাণসামগ্রী ক্রয়

  • নির্মাণসামগ্রী বাকিতে ক্রয় করে দুই বছরের মধ্যে পরিশোধ না করলে, সেই পরিমাণ অর্থ অন্যান্য উৎস থেকে আয়।

উদাহরণ: আপনি ৩,০০,০০০ টাকার ইট বাকিতে ক্রয় করেছেন এবং দুই বছরের বেশি সময় পরিশোধ করেননি। এটি আয় হিসেবে গণ্য হবে।

কর রিটার্নে সঠিক তথ্য প্রদর্শনের গুরুত্ব

  • কর আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে আয় ও ব্যয়ের তথ্য প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক।
  • ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করলে আইনগত জটিলতা হতে পারে।
  • কর রিটার্ন প্রস্তুতের সময় কর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

Leave a Comment

Share this Doc

অন্যান্য উৎস থেকে আয় আয়কর রিটার্নে দেখাবেন কিভাবে?

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel