Comment

অন্যান্য ও বিশেষ আয়

আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয় গণনা পদ্ধতি

Estimated reading: 1 minute 12 views Contributors

সঞ্চয়পত্র আমাদের মধ্যে একটি খুব পরিচিত আর্থিক পরিসম্পদ, যা বেশি মুনাফার আশায় বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের একটি বিশেষ সুবিধা হলো, বিনিয়োগ করা বছরের কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যায় এবং সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফা চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এর অর্থ হলো, আয় যাই থাকুক না কেন, উৎসে যে কর কর্তন করা হয়েছে তা চূড়ান্ত কর হিসেবে গৃহীত হবে, এবং করদাতাকে নতুন করে আর কোনো কর দিতে হবে না। এই কারণে সঞ্চয়পত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় ও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।

সঞ্চয়পত্র ছাড়াও আরো বিভিন্ন আর্থিক পরিসম্পদ রয়েছে, যা থেকে আয় করা সম্ভব। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৬২ অনুযায়ী নিচের আয়গুলো আর্থিক পরিসম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় হিসেবে বিবেচিত হবে:

  • ক) প্রাপ্ত লভ্যাংশ।
  • খ) সরকারি বা সরকার অনুমোদিত সিকিউরিটিজ থেকে প্রাপ্ত সুদ, মুনাফা বা বাট্টা।
  • গ) ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদ বা মুনাফা।
  • ঘ) কোনো আর্থিক পণ্য বা স্কিম থেকে প্রাপ্ত সুদ বা মুনাফা।
  • ঙ) স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোম্পানি কর্তৃক ইস্যুকৃত ডিবেঞ্চার বা অন্যান্য সিকিউরিটিজ থেকে প্রাপ্ত সুদ, মুনাফা বা বাট্টা।

    তবে, আর্থিক পরিসম্পদ হস্তান্তর করে অর্জিত মূলধনী আয় আর্থিক আয় হিসেবে গণ্য হবে না, কারণ তা মূলধনী আয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

আর্থিক পরিসম্পদ আয় থেকে অনুমোদনযোগ্য খরচ কোনগুলো?

যখন আপনি আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয় করেন, তখন আয় গণনার ক্ষেত্রে কিছু অনুমোদনযোগ্য খরচ বাদ দেওয়া যায়। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৬৪ অনুযায়ী, নিম্নলিখিত খরচগুলো বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করা যায়:

  1. সুদ/মুনাফা প্রদানের বিপরীতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্তনকৃত অর্থ
  2. আর্থিক পরিসম্পদ অর্জনের জন্য নেওয়া ঋণের সুদ
  3. আর্থিক পরিসম্পদ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য খরচ

উদাহরণ ১:
জনাব সাজ্জাদ হোসেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৫,০০,০০০ টাকা স্থায়ী আমানত রেখেছেন। এই আমানত থেকে তিনি তিন মাস অন্তর ১২,০০০ টাকা মুনাফা পান। মুনাফা থেকে ব্যাংক ১,২০০ টাকা উৎসে কর এবং ১০০ টাকা ব্যাংক চার্জ হিসেবে কর্তন করে। তাই তার বাৎসরিক মোট আয় হবে:

  • তিন মাসে মুনাফা: ১২,০০০ টাকা
  • ১২ মাসে মুনাফা: ৪৮,০০০ টাকা
  • ১২ মাসে ব্যাংক চার্জ: ৪০০ টাকা (১০০ টাকা × ৪ বার)

মোট আয় = (৪৮,০০০ – ৪০০) = ৪৭,৬০০ টাকা

উদাহরণ ২:
জনাব আরিফুর রহমান ১,০০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে ৫,০০,০০০ টাকার ডিবেঞ্চার কিনেছেন। বছরে ডিবেঞ্চার থেকে সুদ পান ৫০,০০০ টাকা এবং ঋণের সুদ প্রদান করেন ১২,০০০ টাকা। তাই তার আর্থিক পরিসম্পদ থেকে করযোগ্য আয় হবে:

  • মোট সুদ: ৫০,০০০ টাকা
  • ঋণের সুদ: ১২,০০০ টাকা

নিট আয়: ৩৮,০০০ টাকা (৫০,০০০ – ১২,০০০)।

উদাহরণ ৩:
মিস সমা ২,০০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে ৫,০০,০০০ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। বছরে তিনি মুনাফা পেয়েছেন ৬০,০০০ টাকা এবং ঋণের সুদ দিয়েছেন ২৪,০০০ টাকা। সঞ্চয়পত্রের সুদের ক্ষেত্রে, যেহেতু এটি চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই এর থেকে কোনো সুদ বাদ দেওয়া যাবে না। তাই সঞ্চয়পত্রের সুদের উপর কর দিতে হবে না।

সঞ্চয়পত্রের সুদ কর গণনায় কীভাবে বিবেচনা করবেন?

সঞ্চয়পত্রের সুদ আলাদা খাত হিসেবে কর রিটার্নে দেখাতে হয়। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে যেমন কর রেয়াত পাওয়া যায়, তেমনি সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত সুদের উপর উৎসে কর কর্তন করে চূড়ান্ত কর হিসাবে গৃহীত হয়। যদি আপনি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেনেন এবং তিন বছরে মুনাফাসহ টাকা ফেরত পান, তাহলে উৎসে কর কর্তন করা হবে এবং বাকি টাকা আপনাকে পরিশোধ করা হবে।

এফডিআর-এর ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের মতো চূড়ান্ত কর প্রযোজ্য হয় না। এফডিআর থেকে প্রাপ্ত সুদের উপর আপনাকে করের হিসাব করতে হবে এবং আয় হিসেবে রিটার্নে দেখাতে হবে।


Leave a Comment

Share this Doc

আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয় গণনা পদ্ধতি

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel