Comment

অন্যান্য ও বিশেষ আয়

ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ আয় থেকে আয়কর গণনা পদ্ধতি

Estimated reading: 1 minute 24 views Contributors

অনুচ্ছেদ ৩.৭-এ আমরা একজন ব্যবসায়ীর করদায় নির্ণয়ের পদ্ধতি আলোচনা করেছি, যেখানে একজন একক মালিকানার ব্যবসার মালিক তার ব্যবসা থেকে আয়কর কীভাবে নির্ণয় করবেন তা জানা গেছে। একজন ব্যক্তি করদাতা একক মালিকানা ব্যবসা ছাড়াও অংশীদারী ফার্ম বা কোম্পানির সঙ্গে জড়িত হতে পারেন। এই অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হবে, একজন ব্যক্তি করদাতা যদি কোনো ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ (Association of Persons – AOP) এর সাথে সম্পৃক্ত থেকে আয় করেন, তবে কীভাবে সেটি তার মোট আয়ের সাথে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আয়কর নির্ণয় করতে হবে।

ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ থেকে আয়ের সংজ্ঞা

আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(৫৮) অনুযায়ী, “ফার্ম” বলতে Partnership Act, 1932-এ সংজ্ঞায়িত কোনো ফার্মকে বোঝায়। সাধারণভাবে পার্টনারশিপ ফার্ম বলা হয় যার মালিকগণ অংশীদার হিসেবে পরিচিত। একাধিক ব্যক্তি মিলে এই পার্টনারশিপ ফার্ম গঠন করতে পারেন এবং আনুপাতিক হারে মূলধন ও মুনাফা ভাগাভাগি করে নেন। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(৭) অনুযায়ী, অংশীদার বলতে Partnership Act, 1932 অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত অংশীদারকে বোঝায় এবং এতে নাবালক অংশীদারও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

সাধারণভাবে, একাধিক ব্যক্তি যখন একত্রিত হয়ে কোনো অংশীদারী ব্যবসা করেন এবং ব্যবসার লাভ-লোকসান ভাগ করে নেন, তখন সেটি পার্টনারশিপ ফার্ম হিসেবে গণ্য হয়। ফার্মের মতোই, একাধিক ব্যক্তি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে ব্যক্তিসংঘ গঠন করতে পারেন। ফার্মের মালিককে বলা হয় অংশীদার এবং ব্যক্তিসংঘের মালিককে বলা হয় সদস্য। ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের আয় হিসাব করে আলাদাভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয় এবং সেই আয়ের উপর নির্ধারিত করহারে আয়কর দিতে হয়।

যেহেতু ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ তাদের মুনাফার উপর একবার কর প্রদান করেছে, তাই অংশীদার বা সদস্য যখন কর-পরবর্তী আয়ের অংশগ্রহণ করেন, তখন সেই আয় তাদের মোট আয়ের সাথে যোগ করে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করতে হয়। তবে এই আয়ের উপর পুনরায় কর প্রদানের প্রয়োজন নেই, বরং গড় হারে কর হ্রাস করা যায়।

গড় হারে কর হিসাব করার নিয়ম

গড় হারে কর নির্ণয়ের জন্য নিচের সূত্র ব্যবহার করা হয়:

ট = ক × (খ / গ)

এখানে,

  • = ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের আয়সহ করদাতার মোট করযোগ্য আয়ের উপর করদায়;
  • = করদাতার মোট করদায়;
  • = ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ থেকে প্রাপ্ত আয়;
  • = ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের আয়সহ করদাতার মোট করযোগ্য আয়।

সহজভাবে বলতে গেলে, মোট করদায়কে মোট করযোগ্য আয় দিয়ে ভাগ করে, তারপর ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে গুণ করলে গড় হারে করের পরিমাণ পাওয়া যায়।

এই অংশীদারী ব্যবসার আয়কর নির্ণয়ের বিস্তারিত এখানে আলোচনা করা হবে না। এখানে দেখানো হবে কীভাবে একজন করদাতা তার ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা করদাতার মোট আয়ের সাথে যুক্ত করে করদায় নির্ণয় করবেন এবং পরে গড় হারে কর হ্রাস করে নিট করদায় নির্ধারণ করবেন।

ফার্ম থেকে আয় পেলে করদায় নির্ণয় পদ্ধতি

জনাব রাহাত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং পাশাপাশি তার তিনজন বন্ধুর সাথে একটি পার্টনারশিপ ফার্ম গঠন করেছেন। তারা সমানুপাতিক হারে মূলধন দিয়েছেন এবং বছরে লাভ-লোকসান নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নেন। নিচে তার সারাবছরের আয়ের তথ্য দেওয়া হলো:

  • ১. চাকরি থেকে মোট আয়: ১২,০০,০০০ টাকা। তার কোম্পানি উৎসে ৩০,০০০ টাকা কর্তন করে বেতন পরিশোধ করেছে।
  • ২. ফার্ম থেকে প্রাপ্ত আয়: ৩,০০,০০০ টাকা।
  • ৩. এফডিআর থেকে মুনাফা: এফডিআর থেকে ৬,০০০ টাকা উৎসে কর কর্তনের পর ৫৪,০০০ টাকা মুনাফা পেয়েছেন।

এছাড়া রাহাদতর নামে ১,৩০,০০০ টাকার একটি ডিপিএস আছে এবং শেয়ারবাজার থেকে ২,০০,০০০ টাকার সরকারি বন্ড কিনেছেন। চলুন তার করযোগ্য আয় এবং করদায় নির্ণয় করি।

করযোগ্য আয় নির্ণয়

চাকরি খাত থেকে আয়: মোট আয় ১২,০০,০০০ টাকা।

  • অব্যাহতি: চাকরির আয়ের ১/৩ অংশ, অর্থাৎ ১২,০০,০০০ / ৩ = ৪,০০,০০০ টাকা বা ৪,৫০,০০০ টাকা, যার মধ্যে কম অংকটি অর্থাৎ ৪,০০,০০০ টাকা বাদ যাবে।
  • করযোগ্য চাকরি খাতের আয়: (১২,০০,০০০ – ৪,০০,০০০) = ৮,০০,০০০ টাকা।

মোট করযোগ্য আয়

বিবরণটাকা
চাকরি থেকে আয়৮,০০,০০০
ফার্ম থেকে প্রাপ্ত আয়৩,০০,০০০
এফডিআর থেকে প্রাপ্ত মুনাফা৬০,০০০
মোট করযোগ্য আয়১১,৬০,০০০

বিনিয়োগ ভাতা এবং কর রেয়াত নির্ণয়

করযোগ্য আয় নির্ণয়ের পর কর রেয়াত নির্ণয় করতে হবে, যা চূড়ান্ত করদায় থেকে বাদ যাবে। রাহাত বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন এবং আয়কর আইন ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী বিনিয়োগ ভাতা নির্ণয় করতে হবে। নিচে তার বিনিয়োগের বিবরণ দেওয়া হলো।

বিনিয়োগ ভাতা

বিবরণটাকা
ডিপিএস১,২০,০০০
বন্ড ক্রয়২,০০,০০০
মোট বিনিয়োগ৩,২০,০০০

কর রেয়াত

কর রেয়াত বের করার জন্য তিনটি অংক নির্ণয় করতে হবে এবং এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট অংকটি গ্রহণ করা হবে:

  • ১. করযোগ্য আয়ের ৩%: ১১,৬০,০০০ × ৩% = ৩৪,৮০০ টাকা।
  • ২. বিনিয়োগ ভাতার ১৫%: ৩,২০,০০০ × ১৫% = ৪৮,০০০ টাকা।
  • ৩. সর্বাধিক সীমা: ১০,০০,০০০ টাকা।

তিনটি অংকের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি হলো ৩৪,৮০০ টাকা, যা রাহাতের কর রেয়াত।

করদায় নির্ণয়

করযোগ্য আয়করহারকরদায় (টাকা)
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত০%
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত৫%৫,০০০
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১০%৪০,০০০
অবশিষ্ট ৩,১০,০০০ টাকা পর্যন্ত১৫%৪৬,৫০০
মোট করদায়৯১,৫০০
বাদ: কর রেয়াত৩৪,৮০০
নিট করদায়৫৬,৭০০
বাদ: গড় হারে কর (৫৬,৭০০ × ৩,০০,০০০ / ১১,৬০,০০০)১৪,৬৬৪
বাদ: উৎসে কর কর্তন (৩০,০০০ + ৬,০০০)৩৬,০০০
রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে প্রদত্ত কর৬,০৩৬

জনাব রাহাত রিটার্ন দাখিলের সময় ৬,০৩৬ টাকা চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে চালানের কপি রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করবেন। উপরে আমরা দেখেছি কীভাবে গড় হারে কর নির্ণয় করে তা করদায় থেকে বাদ দিতে হয়। অংশীদারী ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর পুনরায় কর প্রদানের প্রয়োজন নেই, কারণ ফার্ম ইতোমধ্যেই এই আয়ের উপর কর পরিশোধ করেছে। ব্যক্তিসংঘ বা ফার্ম থেকে আয় পেলে উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করেই করদায় নির্ণয় করতে হবে।


Leave a Comment

Share this Doc

ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ আয় থেকে আয়কর গণনা পদ্ধতি

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel