Comment

অন্যান্য ও বিশেষ আয়

বিদেশ থেকে অর্জিত আয়

Estimated reading: 1 minute 11 views Contributors

একজন করদাতা বিদেশে গিয়ে শারীরিকভাবে কাজ করে আয় করতে পারেন বা দেশে বসেই অনলাইনে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারেন। যাই হোক না কেন, বিদেশে গিয়ে বা না গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করলে সেটি আয়ের ধরন অনুযায়ী করযোগ্য হতে পারে। আবার কিছু আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত হতে পারে। একজন করদাতা ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করার সময় বিদেশ থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আয় কখন করযোগ্য হবে এবং কখন করমুক্ত থাকবে, এটি জানা জরুরি। এই অনুচ্ছেদে আমরা তিন ধরনের আয় সম্পর্কে আলোচনা করবো, যা একজন ব্যক্তি বিদেশে গিয়ে বা দেশে বসে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করতে পারেন।

বিদেশে অবস্থান করে অর্জিত আয়

অনেক বাংলাদেশি বিদেশে গিয়ে কাজ করেন এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। এভাবেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ হয়। আয়কর আইন ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিল, অংশ ১, দফা ১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশি কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা যদি বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করেন এবং সেই আয় বৈধ প্রক্রিয়ায় দেশে পাঠান, তবে সেই আয় করমুক্ত থাকবে।

এক্ষেত্রে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে: প্রথমত, বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে অবস্থান করে উপার্জন করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক রেমিট্যান্স সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন মেনে বৈধভাবে বাংলাদেশে আনতে হবে। করদাতা যদি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা আনেন, তাহলে সেই আয়ের উপর কোনো কর প্রযোজ্য হবে না। তাছাড়া, বাংলাদেশ সরকার গত কয়েক বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্সের উপর একটি নির্দিষ্ট হারে ইনসেনটিভ দিয়ে আসছে, যা বৈদেশিক আয়ের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে পাওয়া যায়।

দেশে অবস্থান করে বৈদেশিক মুদ্রায় আয়

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আমরা অনলাইনে কাজ করে, ঘরে বসেই বিদেশি ক্লায়েন্টদের সেবা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করতে পারি। তবে এ ধরনের আয়ের উপর ব্যাংক ৭.৫% উৎসে কর কর্তন করে থাকে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ১২৪ অনুযায়ী, ফি বা সেবার পারিশ্রমিক হিসেবে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যাংক কর্তৃক উৎসে কর কর্তন করার অধীনে পড়ে। এই করদায়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সেবাগুলোর বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে পারে:

  • বাংলাদেশে প্রদান করা কোনো সেবা;
  • কোনো নিবাসী ব্যক্তি কর্তৃক কোনো বিদেশি ব্যক্তিকে পরিষেবা প্রদান বা যেকোনো কাজের জন্য সেবা প্রদান;
  • বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের অনুমতি প্রদান।

উপরোক্ত সেবাগুলোর বিনিময়ে আয় করা বৈদেশিক মুদ্রা করদাতার আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং করদায়ে গণ্য হবে। তবে যারা আইটি সেবা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন, তাদের জন্য এই আয় করমুক্ত।

করমুক্ত আইটি সেবার খাত

আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী মোট ১৯টি আইটি খাত রয়েছে, যার মধ্যে করমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। যদি কোনো করদাতা ব্যবসায়িকভাবে এই ১৯টি খাতের যেকোনো একটিতে আয় করেন, তবে সেটি দেশ বা বিদেশে যেখানেই হোক না কেন, করমুক্ত আয় হিসেবে গণ্য হবে। এই সুবিধা ৩০ জুন ২০২৭ পর্যন্ত বৈধ থাকবে। তবে করদাতাকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে একটি শর্ত হলো, সকল খরচ ক্যাশলেস হতে হবে। অর্থাৎ নগদে কোনো খরচ করা যাবে না। এছাড়া এই ১৯টি খাত থেকে প্রাপ্ত আয় ব্যবসা থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে। কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি যদি নিজের নামে এই আয় করেন তবে এটি করমুক্ত হবে না।

অনুচ্ছেদ ৩.৭-এ ‘ব্যবসা’র সংজ্ঞা ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। একজন করদাতা যদি এককভাবে ব্যবসা করতে চান, তবে তিনি তার এলাকার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসার নামে এই আইটি খাত থেকে আয় করতে পারেন এবং সেই আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখতে পারেন। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আর কোনো বিশেষ প্রয়োজন নেই। নিজ নামে টিআইএন ও ট্রেড লাইসেন্স থাকলে ব্যাংকে হিসাব খোলা সম্ভব এবং ব্যবসার নামে লেনদেন করা যায়। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেই একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা আইটি সেবার আয় করমুক্ত রাখতে পারেন।

আয়কর আইন ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিল, অংশ ১, দফা ২১-এ উল্লিখিত ১৯টি আইটি খাতের বিবরণ অনুচ্ছেদ ৪.৮-এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক তরুণ-তরুণী অনলাইনে বিদেশি ক্রেতাদের সেবা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করছেন এবং তারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করে এই আইটি খাত থেকে আয় করে সম্পূর্ণ আয় করমুক্ত রাখতে পারেন।


Leave a Comment

Share this Doc

বিদেশ থেকে অর্জিত আয়

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel