Comment

করদায় নির্ণয় প্রক্রিয়া

কৃষকের করদায় নির্ণয়

Estimated reading: 1 minute 17 views Contributors

কৃষি আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। অনেকের গ্রামাঞ্চলে জমি আছে, যেখানে তারা চাষাবাদ করে। এই জমি থেকে যদি আপনি আয় করেন, তাহলে সেই আয়কে কৃষি আয় হিসেবে দেখাতে হবে এবং এর জন্য কর দিতে হবে। এই অধ্যায়ে আমরা জানব কীভাবে কৃষি আয় থেকে করযোগ্য আয় বের করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কর নির্ধারণ করতে হবে।

কী কী অন্তর্ভুক্ত হবে?

আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী কৃষি আয়ের স্পষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে, কোনো ব্যক্তির যদি কৃষি থেকে আয় হয়, যেমন- ফসল উৎপাদন, উদ্যান পালন, গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য খামার, ডিম বা দুধ উৎপাদন, কাঠ বা তৃণ উৎপাদন, মধু সংগ্রহ ইত্যাদি—তাহলে তা কৃষি আয় হিসেবে গণ্য হবে।

কৃষি আয়ের ধরণ: সাধারণ ও বিশেষ আয়

কৃষি আয়ের সাধারণ ধরণের মধ্যে রয়েছে ফসল উৎপাদন বা পশুপালন থেকে প্রাপ্ত আয়। কিন্তু কখনো কখনো বিশেষ ধরনের আয়ও হতে পারে। যেমন:

  • কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রয় থেকে আয় বা ক্ষতি: ধরুন একজন কৃষক তার ট্রাক্টর বিক্রি করলেন। যদি বিক্রয় মূল্য ক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে লাভের অংশ মূলধনী আয় হিসেবে এবং অবচয়কৃত অংশ কৃষি আয় হিসেবে গণ্য হবে। আবার ক্ষতি হলে সেই ক্ষতি কৃষি আয় থেকে বাদ দেওয়া যাবে।

উদাহরণ:

জনাব মোস্তাকিম ৭০,০০০ টাকায় একটি ট্রাক্টর কিনেছিলেন। কয়েক বছর ব্যবহারের পর অবচয় ধার্য করার পর তার মূল্য দাঁড়ায় ৫০,০০০ টাকা। তিনি সেটি ৭৫,০০০ টাকায় বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে

লাভ মূলধনী আয় ৫,০০০ টাকা এবং অবচয় পরবর্তী মূল্য ২০,০০০ টাকা কৃষি আয় হিসেবে গণ্য হবে।

আংশিক কৃষি আয়: চা ও রাবার

কিছু আয় কৃষি ও ব্যবসার মধ্যে ভাগ করতে হয়। যেমন চা ও রাবার উৎপাদন থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৬০% কৃষি আয় এবং ৪০% ব্যবসা আয় হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, তাজ এন্টারপ্রাইজের চা বাগান থেকে বছরে ৫০,০০,০০০ টাকা আয় হলে, এর ২০,০০,০০০ টাকা ব্যবসা আয় এবং ৩০,০০,০০০ টাকা কৃষি আয় হবে।

কৃষি আয় থেকে অনুমোদিত খরচ: কী কী বাদ দিতে পারবেন?

আমরা জানি আংশিক আয়সমূহ বাদ যায়। এছাড়াও কৃষি থেকে প্রাপ্ত আয় থেকে কিছু নির্দিষ্ট খরচ বাদ দেওয়া যায়, যা আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৪২-এ উল্লেখ আছে। এই খরচগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ভূমি কর বা খাজনা।
  • সেচ ও মজুরির খরচ।
  • কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি রক্ষণাবেক্ষণ।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির ক্ষতিপূরণ ব্যয়।
  • কৃষিকাজে ব্যবহৃত স্থায়ী সম্পদের অবচয় ভাতা।
  • কৃষির জন্য গৃহীত ঋণের সুদ বা মুনাফা পরিশোধের ব্যয়।
  • ভূমি, ফসল বা গবাদিপশুর ক্ষতিপূরণের জন্য পরিশোধিত বীমার প্রিমিয়াম।

তৃতীয় তফসিলে উল্লেখিত অনুমোদিত সীমার অধীন কিছু খরচ রয়েছে।

  • অনুমোদিত সীমার খরচ:
  • কৃষিতে ব্যবহৃত সম্পদের অবচয়।
  • কৃষিকাজে ব্যবহৃত স্পর্শাতীত সম্পদের অ্যামোটাইজেশন।
  • কৃষিকাজে ব্যবহৃত পশুর মৃত্যু বা অক্ষমতার কারণে ক্ষতিপূরণের হিসাব।
  • সরকার কর্তৃক স্পন্সরকৃত ডেলিগেশনের অংশ হিসেবে বিদেশ সফরের ব্যয়, যা মূলধনি প্রকৃতির নয়।
  • কৃষি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের জন্য বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ব্যয়।
  • কৃষির উন্নয়নে পরিচালিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার খরচ।

কৃষি আয় থেকে খরচ বাদ দেওয়া

ধরে নিই, জনাব রাফসান তার জমিতে চাষ করে ৮০,০০০ টাকার ধান পেয়েছেন। যেহেতু তিনি কোনো হিসাব বই রাখেননি, তাই আয়ের ৬০% খরচ হিসেবে বাদ দিতে পারবেন, যা দাঁড়ায় ৪৮,০০০ টাকা। সুতরাং তার করযোগ্য আয় হবে ৩২,০০০ টাকা।

কৃষি আয়ের ওপর কর নির্ধারণ

আসুন এবার একটি উদাহরণের মাধ্যমে দেখাই কীভাবে একজন কৃষকের কর নির্ধারণ করা হয়। রাফসান তার জমিতে চাষ করে বছরে ২৫,০০,০০০ টাকা আয় করেছেন। তার খরচের বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:

  • বীজ, কীটনাশক ও সেচ খরচ: ৪,৫০,০০০ টাকা
  • মজুরি ও জমি চাষের খরচ: ৩,৫০,০০০ টাকা
  • ট্রাক্টরের অবচয়: ১০,০০০ টাকা
  • খাজনা: ৩০,০০০ টাকা
  • অন্যান্য খরচ: ১০,০০০ টাকা

মোট খরচ = (৪,৫০,০০০+ ৩,৫০,০০০+ ১০,০০০+ ৩০,০০০+১০,০০০) = ৮,৫০,০০০ টাকা

করযোগ্য আয় নির্ণয় টেবিল

বিবরণটাকা
কৃষি থেকে মোট আয়২৫,০০,০০০
বাদ:মোট খরচ৮,৫০,০০০
করযোগ্য আয়১৬,৫০,০০০

কর রেয়াত: কীভাবে বের করবেন?

ধরুন, রাফসান বছরে ২,৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কর রেয়াত নির্ণয়ে তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, যার মধ্যে সর্বনিম্নটি গ্রহণ করা হয়:

  1. করযোগ্য আয়ের ৩%: অর্থাৎ, কর রেয়াত = (১৬,৫০,০০০ × ৩%) = ৪৯,৫০০ টাকা
  2. বিনিয়োগের ১৫%: অর্থাৎ, কর রেয়াত = (২,৫০,০০০ × ১৫%) = ৩৭,৫০০ টাকা
  3. সর্বোচ্চ সীমা: ১০,০০,০০০ টাকা

এখানে সবচেয়ে কম ৩৭,৫০০ টাকা হবে রাফসানের কর রেয়াত।

কর নির্ধারণের ধাপ

শেষ ধাপে আমরা কর নির্ধারণ করব। রাফসানের করযোগ্য আয় ১৬,৫০,০০০ টাকা এবং কর রেয়াত ৩৭,৫০০ টাকা। নিচের টেবিল থেকে তার কর নির্ণয় দেখে নিন:

করযোগ্য আয়কর হারকরদায় (টাকা)
প্রথম ৫,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত০%
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত৫%৫,০০০
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১০%৪০,০০০
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১৫%৭৫,০০০
অবশিষ্ট ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত২০%২০,০০০
মোট করদায়১,৪০,০০০
বাদ: কর রেয়াত৩৭,৫০০
নিট করদায়১,০২,৫০০
যেহেতু তিনি কোনো অগ্রিম কর প্রদান করেননি, তাই পুরো টাকাই রিটার্ন দাখিলের সময় জমা দিতে হবে।

কৃষি থেকে আয় হলে কীভাবে কর নির্ধারণ করতে হবে তা আমরা এই অধ্যায়ে বিস্তারিত দেখলাম। আপনি যদি একজন কৃষক হন এবং আপনার কৃষি থেকে আয় থাকে, তাহলে এই ধাপগুলো অনুসরণ করে কর নির্ধারণ করতে পারেন। নিজের কর নির্ধারণের প্রক্রিয়া ভালোভাবে বুঝতে চাইলে উদাহরণগুলো নিজে হাতে কাগজে-কলমে করে দেখতে পারেন।


Leave a Comment

Share this Doc

কৃষকের করদায় নির্ণয়

Or copy link

CONTENTS

Subscribe

×
Cancel