করদায় নির্ণয় প্রক্রিয়া ব্যবসায়ী করদাতার করদায় গণনা Estimated reading: 1 minute 13 views Contributors আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(৭০)-এ ব্যবসার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় যে কোনো ট্রেড, বাণিজ্য, পণ্য উৎপাদন, পেশা বা বৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন করা আয়কে ব্যবসা হিসেবে গণ্য করা হয়। যদি কোনো ব্যক্তি এই আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তবে তার আয়কে ব্যবসা আয় হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কর প্রদান করতে হবে।ব্যবসা থেকে আয়ের সংজ্ঞা: কী কী অন্তর্ভুক্ত হবে?আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী, নিচের আয়গুলো ব্যবসা থেকে আয় হিসেবে গণ্য হবে-ব্যবসার লাভ ও মুনাফা। সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রাপ্ত আয়। ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে উদ্ভুত কোনো সুবিধার ন্যায্য বাজারমূল্য। মুদ্রা বিনিময় থেকে অর্জিত লাভ (মূলধনী পরিসম্পদ নয় এমন)। বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয়।সাধারণভাবে, ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয়গুলোকে করযোগ্য আয়ের সাথে যুক্ত করতে হবে, তবে মূলধনী আয়ের বিষয়গুলো আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে।মূলধনী আয়সমূহ:স্থায়ী সম্পদ বিক্রয় থেকে আয় বা ক্ষতি বীমা থেকে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণসাধারণ আয় এবং মূলধনী আয়ের মধ্যে পার্থক্যব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় সাধারণত নিয়মিত আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অর্জিত হয়। তবে মূলধনী আয় হলো স্থায়ী সম্পদ বিক্রয় বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ফলে অর্জিত আয়, যা সাধারণ ব্যবসা আয়ের অংশ নয়।উদাহরণ ১: স্থায়ী সম্পদ বিক্রয় থেকে আয়মৃত্তিকা এন্টারপ্রাইজ অফিসের কাজের জন্য কিছু ল্যাপটপ কিনেছিল ২,০০,০০০ টাকায়। এক বছর ব্যবহারের পর ল্যাপটপগুলোর মূল্য অবচয় ধরা হয় ১,৪০,০০০ টাকা। এরপর তারা ল্যাপটপগুলো ২,১০,০০০ টাকায় বিক্রি করেছে। এখানে ১০,০০০ টাকা লাভ মূলধনী আয় হিসেবে এবং অবচয় পরবর্তী ৬০,০০০ টাকা ব্যবসা আয় হিসেবে দেখানো হবে।উদাহরণ ২: স্থায়ী সম্পদ বিক্রয় থেকে ক্ষতিমৃত্তিকা এন্টারপ্রাইজ যদি ল্যাপটপগুলো ১,০০,০০০ টাকায় বিক্রি করত, তাহলে তাদের ৪০,০০০ টাকা ক্ষতি হতো। এই ক্ষতি তারা ব্যবসা আয় থেকে বাদ দিতে পারবে।উদাহরণ ৩: বীমা থেকে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণমৃত্তিকা এন্টারপ্রাইজ তাদের ল্যাপটপগুলো বীমা করেছিল। যদি কোনো দুর্ঘটনায় ল্যাপটপগুলো পুড়ে যায় এবং বীমা কোম্পানি ১,২০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে ২০,০০০ টাকার ক্ষতি তারা ব্যবসা আয় থেকে বাদ দিতে পারবে। কিন্তু যদি বীমা কোম্পানি ১,৪৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে ৫,০০০ টাকা লাভ হিসেবে ব্যবসায় আয়ের সাথে যুক্ত হবে।আংশিক ব্যবসা আয়: চা ও রাবারকিছু আয় কৃষি এবং ব্যবসার উভয়ের সাথে জড়িত হতে পারে। যেমন, চা ও রাবারের উৎপাদন থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৪০% ব্যবসার আয় এবং ৬০% কৃষি আয় হিসেবে দেখাতে হবে।উদাহরণ: ৪সাকিল এন্টারপ্রাইজের পঞ্চগড়ে একটি চা-বাগান রয়েছে। সারাবছরে চা বিক্রি করে তারা ৫০,০০,০০০ টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে ৪০% অর্থাৎ ২০,০০,০০০ টাকা ব্যবসা আয় এবং ৬০% অর্থাৎ ৩০,০০,০০০ টাকা কৃষি আয় হিসেবে দেখানো হবে।ব্যবসার করযোগ্য আয় নির্ণয় পদ্ধতি সূত্র: ব্যবসার করযোগ্য আয় = (ব্যবসায় থেকে মোট আয় – অনুমোদিত খরচ)ব্যবসা থেকে মোট আয় নির্ণয়ের পর অনুমোদিত খরচ বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করা হয়। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৪৯ অনুযায়ী, একজন ব্যবসায়ী তার আয় থেকে নিম্নোক্ত খরচগুলো বাদ দিতে পারবেন:পণ্য(কাঁচামাল) ক্রয় ও মজুদ খরচ ভূমি ও আঙ্গিনার খাজনা( কৃষি বা ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত জমির খাজনা)। চাকরিজনিত খরচ (কর্মচারীদের বেতন, কল্যাণ ব্যয়)। যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। বীমা প্রিমিয়াম (ব্যবসার উদ্দেশ্যে পরিশোধিত বিমা)। ইউটিলিটি খরচ (বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিষেবা)। আইনি ও পেশাদারী সেবা ব্যয়।অবচয় হারব্যবসায় ব্যবহৃত স্থায়ী সম্পদের উপর অবচয় ধার্য করা হয়। আয়কর আইন ২০২৩-এর তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী, স্থায়ী সম্পদের অবচয় হার নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচে একটি টেবিল দেওয়া হলো:ক্র. নংপরিসম্পদের শ্রেণিহার(অবলোপিত মূল্যের)১.ইমারত (এই টেবিলে অন্য কোনোভাবে নির্দিষ্ট না থাকিলে)৫%২.কারখানা ভবন১০%৩.আসবাবপত্র ও ফিটিংস১০%৪.অফিসের সমঞ্জাম১০%৫.যন্ত্রপাতি, স্থাপনা ও সরঞ্জাম (এই টেবিলে অন্য কোনোভাবে নির্দিষ্ট থাকিলে)১০%৬.সমুদ্রগামী জাহাজ২০%৭.এক্স-রে, ইলেকট্রথেরাপিউটিক ও তার খুচরা যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য মেডিকেল যন্ত্রপাতি২০%৮.ব্যাটারি চালিত এ্যাপারেটাস ও রিচার্জেবল ব্যাটারি৩০%৯.অডিও-ভিজুয়াল পণ্য উৎপাদন ও প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি২০%১০.ভাড়ায় চালিত ব্যতীত সকল প্রকার মোটরযান১০%১১.ভাড়ায় চালিত সকল প্রকার মোটরযান১০%১২.প্রিন্টার, মানিটর ও আনুষঙ্গিক আইটেমসহ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ২৫%১৩.প্রফেশনাল ও রেফারেন্স বই২৫%১৪.এয়ারক্রাফট, এরোইঞ্জিন ও এরিয়াল ফটোগ্রাফিক যন্ত্রপাতি৩০%১৫.কাঁচ বা প্লাস্টিক পণ্য বা কনক্রিট পাইপ তৈরিতে ব্যবহৃত ছাঁচ৩০%১৬.খনিজতেলে সম্পর্কিতক) মাটর নীচে স্থাপিত সরঞ্জামাদিখ) বহনযোগ্য বয়লার, খনন যন্ত্র, ওয়েলহেড ট্যাংক ও রিগসহ মাটির উপরে স্থাপিত অন্যান্য সরঞ্জামাদি১০০%২৫%১৭.সেতু২%১৮.রাস্তা২%১৯.ফ্রাইওভার২%২০.পেভমেন্ট রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে২.৫%২১.এপ্রোন, টারম্যাক২.৫%২২.বোর্ডিং ব্রিজ১০%২৩.যোগাযোগ ও অনুসন্ধান সহায়ক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম৫%২৪.এই টেবিলে উল্লিখিত হয়নি এইরূপ সকল ভৌত পরিসম্পদ১০% কর নির্ধারণধরি মৃত্তিকিা এন্টারপ্রাইজ একটি ট্রেডিং ব্যবসা করে। সারাবছরে তারা পণ্য বিক্রি করেছে ৯৫,০০,০০০ টাকার এবং তাদের ব্যয় ছিল নিম্নরূপ:পণ্য ক্রয়: ৬০,০০,০০০ টাকা শোরুম ভাড়া: ৬,০০,০০০ টাকা কর্মচারীর বেতন: ১০,০০,০০০ টাকা ইউটিলিটি ও অফিস খরচ: ৫০,০০০ টাকা আসবাবপত্রের অবচয়: ১০,০০০ টাকাকরযোগ্য আয় নির্ণয়:বিবরণটাকাবিক্রয় (ক)৯৫,০০,০০০পণ্য ক্রয় (খ)৬০,০০,০০০গ্রস মুনাফা (গ)৩৫,০০,০০০মোট পরিচালন খরচ (ঘ)১৬,৬০,০০০নিট মুনাফা (গ – ঘ)১৮,৪০,০০০বিনিয়োগ ভাতা ও কর রেয়াত নির্ণয়ধরে নিই, জনাব ইমরান বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন যেমন:ডিপিএস: ১,২০,০০০ টাকা (সর্বাধিক সীমা) শিক্ষাবীমার প্রিমিয়াম: ৫০,০০০ টাকা শেয়ার ক্রয়: ৩,০০,০০০ টাকা মোট বিনিয়োগ: ৪,৭০,০০০ টাকা।কর রেয়াত নির্ণয় করতে তিনটি অংক বের করতে হবে এবং সবচেয়ে ছোট অংকটি গ্রহণ করতে হবে:করযোগ্য আয়ের ৩% = (১৮,৪০,০০০ ×৩%) = ৫৫,২০০ টাকা বিনিয়োগ ভাতার ১৫% = (১৮,৪০,০০০ ×৩%) = ৭০,৫০০ টাকা সর্বাধিক সীমা = ১০,০০,০০০ টাকা কর রেয়াত = ৫৫,২০০ টাকা।করদায় নির্ণয়নিচের টেবিলে ইমরানের কর নির্ণয় দেখানো হয়েছে: করযোগ্য আয়কর হারকরদায় (টাকা)প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত০%–পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত৫%৫,০০০পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১০%৪০,০০০পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত১৫%৭৫,০০০অবশিষ্ট ৪,৯০,০০০ টাকা পর্যন্ত২০%৯৮,০০০মোট কর২,১৮,০০০বাদ: কর রেয়াত৫৫,২০০নিট কর১,৬২,৮০০বাদ: উৎসে কর কর্তন১,৩০,০০০বাদ: অগ্রিম কর৫০,০০০অতিরিক্ত কর প্রদান১৭,২০০ব্যবসায় আয় থেকে কর নির্ধারণ করতে হলে প্রথমে মোট আয় থেকে অনুমোদিত খরচ বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হয়। এরপর বিনিয়োগ ভাতা ও কর রেয়াত নির্ণয় করতে হয়। অবশেষে, কর নির্ধারণের সময় প্রযোজ্য কর হার প্রয়োগ করে করদায় নির্ধারণ করতে হয়। অতিরিক্ত কর প্রদানের ক্ষেত্রে তা পরবর্তী করবর্ষে সমন্বয় করা যেতে পারে। করদায় নির্ণয় প্রক্রিয়া - Previous কৃষকের করদায় নির্ণয়