ট্যাক্স রিটার্নের প্রয়োজনীয়তা ও ভূমিকা কাদের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক? Estimated reading: 1 minute 32 views Contributors করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলেই আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। ২০২৪-২৫ করবর্ষে:পুরুষ করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা: ৩,৫০,০০০ টাকা মহিলা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা: ৪,০০,০০০ টাকাযদি ২০২৩-২৪ আয় বছরে আপনার করযোগ্য আয় এই সীমা অতিক্রম করে, তবে আপনাকে এই বছরে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।মোট আয় বনাম করযোগ্য আয়আপনার মোট আয় এবং করযোগ্য আয় এক নয়। জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত আপনার মোট আয় থেকে আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী কিছু অব্যাহতি বা ছাড় পাওয়া যায়। মোট আয় থেকে এই অব্যাহতি বাদ দেওয়ার পর যদি করমুক্ত সীমা অতিক্রম করে, তাহলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।পূর্ববর্তী রিটার্ন দাখিল এবং ধারাবাহিকতাযদি আপনি বিগত বছরে রিটার্ন দাখিল করে থাকেন এবং এই বছরে করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম না করে, তবুও আপনাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, পূর্ববর্তী বছরে রিটার্ন দাখিল করলে পরবর্তী তিন বছর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম না করলেও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক যেসব ক্ষেত্রেকিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম না করলেও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। উদাহরণস্বরূপ:ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ বা ব্যবহার করতে চাইলে। ৫,০০,০০০ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে।আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ২৬৪ অনুযায়ী এমন আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। নিচে সেই তালিকাটি দেওয়া হলো:২০ লক্ষাধিক টাকার ঋণ গ্রহণে। কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হতে চাইলে। আমদানি বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তি ও নবায়নে। ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নে (সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায়)। সমবায় সমিতির নিবন্ধন পেতে। সাধারণ বিমার সার্ভেয়ার হিসেবে লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নে। ১০ লক্ষাধিক টাকার জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়, বিক্রয় বা লিজের সময়। পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে (ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী ইত্যাদি)। বিবাহ নিবন্ধকের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নে। ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও নবায়নে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে। ইট উৎপাদনের অনুমতি প্রাপ্তি ও নবায়নে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে (সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায়)। কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নে। আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়। ৫ লক্ষাধিক টাকার পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়। ১০ লক্ষাধিক টাকার মেয়াদী আমানত খোলা ও বহাল রাখতে। ৫ লক্ষাধিক টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে। নির্বাচনে অংশগ্রহণে (পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় সংসদ)। শেয়ারড ইকোনমি কার্যক্রমে অংশগ্রহণে (মোটরযান, বাসস্থান ইত্যাদি সরবরাহ)। বেতনভুক্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে। মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অর্থ প্রাপ্তিতে। বিভিন্ন সেবা প্রদান বাবদ অর্থ প্রাপ্তিতে (অ্যাডভাইজরি, কনসালট্যান্সি ইত্যাদি)। এমপিও ভুক্তির মাধ্যমে সরকারের নিকট হতে মাসিক ১৬,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে অর্থ প্রাপ্তিতে। বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়নে। মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে (দ্বি-চক্র বা ত্রি-চক্র মোটরযান ব্যতীত)। এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড়কালে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে। ক্লাবের সদস্যপদ লাভের আবেদনকালে। টেন্ডার দাখিলের সময়। পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে। বিল অব এন্ট্রি দাখিলকালে (আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে)। ভবন নির্মাণের নকশা দাখিলকালে (রাজউক, সিডিএ ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের নিকট)। স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন ও নবায়নে। ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, মাইক্রোক্রেডিট সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খোলায়। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণকালে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নে। কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা সমজাতীয় সেবা গ্রহণকালে (সিটি কর্পোরেশন এলাকায়)।প্রশ্নোত্তর পর্ব প্রশ্ন ১: করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম না করলে কি কর দিতে হবে? উত্তর: না। করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম না করলে কর দিতে হবে না। তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, যদিও কর দিতে হবে না। প্রশ্ন ২: করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম না করলে রিটার্ন কীভাবে দাখিল করবেন? উত্তর: এ ক্ষেত্রে এক পাতার সহজ রিটার্ন ফরম রয়েছে। এটি পূরণ করে সহজেই রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। প্রশ্ন ৩: পূর্ববর্তী বছরে রিটার্ন দাখিল করেছি, কিন্তু এই বছর আয় কম। আমাকে কি রিটার্ন দাখিল করতে হবে? উত্তর: হ্যাঁ। পূর্ববর্তী বছরে রিটার্ন দাখিল করলে পরবর্তী তিন বছর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, আয় কম হলেও। প্রশ্ন ৪: করমুক্ত আয়ের সীমা কীভাবে নির্ণয় করব? উত্তর: আপনার মোট আয় থেকে আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী অনুমোদিত অব্যাহতি বা ছাড় বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করতে হবে। এই করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে কর দিতে হবে। প্রশ্ন ৫: রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ কবে? উত্তর: সাধারণত ৩০ নভেম্বর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ। তবে প্রয়োজনে সরকার সময়সীমা বৃদ্ধি করতে পারে। প্রশ্ন ৬: কর রিটার্ন দাখিল না করলে কী হবে? উত্তর: রিটার্ন দাখিল না করলে আইন অনুযায়ী জরিমানা বা বিলম্ব ফি আরোপিত হতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তিতে বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। প্রশ্ন ৭: রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন করব? উত্তর: আপনি নিজে রিটার্ন ফরম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর কার্যালয়ে জমা দিতে পারেন। এছাড়া অনলাইনে ই-রিটার্ন এর মাধ্যমেও দাখিল করা সম্ভব। প্রশ্ন ৮: কর রেয়াত কী এবং এটি কীভাবে পাব? উত্তর: কর রেয়াত হলো কর কমানোর সুবিধা। নির্দিষ্ট বিনিয়োগ বা দান করলে আপনি কর রেয়াত পেতে পারেন। প্রশ্ন ৯: রিটার্ন দাখিলে কোন কোন কাগজপত্র প্রয়োজন? উত্তর: আপনার আয়ের উৎস, বিনিয়োগের প্রমাণ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, টিন সার্টিফিকেট ইত্যাদি কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে। প্রশ্ন ১০: আমি নতুন করদাতা, কীভাবে শুরু করব? উত্তর: প্রথমে আপনাকে টিন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) নিতে হবে। এরপর আয়কর আইন অনুযায়ী রিটার্ন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে কর কার্যালয় বা কর পরামর্শকের সহায়তা নিতে পারেন। আয়কর রিটার্ন দাখিল একটি নাগরিক দায়িত্ব। নিয়মিত রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে আপনি দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং আইনগত সুবিধা পেতে পারেন। তাই সময়মতো রিটার্ন দাখিল করুন এবং আইন মেনে চলুন। আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে আরও জানতে; Next - ট্যাক্স রিটার্নের প্রয়োজনীয়তা ও ভূমিকা করযোগ্য আয়, করমুক্ত আয় এবং করহার